নোটবন্দির ১ বছর

বছর ঘুরে কাজ নেই

গত বছর ৮ নভেম্বর হঠাৎ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেন প্রধানমন্ত্রী। বছর পেরিয়ে এখন বাস্তব অবস্থা কী, দেখল আনন্দবাজারকালিয়াচকের আলিপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ যুবকই ভিন রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। মূলত, মুম্বই, দিল্লি, গোয়ায় যেতেন তাঁরা। সেই কাজে এক শিফটে তাঁদের আড়াইশো টাকা মজুরি মিলত।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share:

বছর গড়াতে চলল। নোটবন্দির পর কাজ হারিয়ে সেই যে মুম্বই থেকে ফিরে এসেছেন, আর কোথাও যাওয়া হয়নি। এখনও বকেয়া রয়েছে মজুরির বেশ কিছু টাকা। ফোনে দরবার করেও সাড়া মেলেনি। এলাকায় তেমন কাজও মেলে না। এখন কার্যত ঘরেই বসে। ফলে বাবা, মা ও চার ভাই-বোনের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম কালিয়াচকের আলিপুর ২ পঞ্চায়েতের মহেশপুর গ্রামের বছর তিরিশের ইব্রাহিম শেখ। ৮ নভেম্বর দিনটির কথা মনে পড়লেই ইব্রাহিম আঁতকে ওঠেন।

Advertisement

শুধু ইব্রাহিমই নন, নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন, এমন কয়েক হাজার যুবক এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মালদহে। কেউ থাকেন কালিয়াচকে, কেউ চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর বা রতুয়ায়। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। তাই কেউ কাজ নিয়েছেন স্থানীয় চায়ের দোকানে, কেউ বাড়ি তৈরিতে জোগাড়ে। কেউ আবার বাড়িতেই বসে। কাজ হারিয়ে ফিরে আসা এই ভাগ্যহীনদের কপালে আবার রাজ্য সরকারের চালু করা ‘সমর্থন’ প্রকল্পের সমর্থনও মেলেনি।

কালিয়াচকের আলিপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ যুবকই ভিন রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। মূলত, মুম্বই, দিল্লি, গোয়ায় যেতেন তাঁরা। সেই কাজে এক শিফটে তাঁদের আড়াইশো টাকা মজুরি মিলত। এখান থেকে যাওয়া শ্রমিকরা দিনে দুই শিফটে কাজ করতেন। অর্থাৎ দৈনিক মিলতো পাঁচশো।

Advertisement

কিন্তু নোটবন্দির পর থেকে বহুতল নির্মাণে ভাটা। ফলে কাজ গিয়েছে অনেকেরই। ইব্রাহিম বলছিলেন, ‘‘সংসারের রসদ জোগাতে অনেক আশা নিয়ে মুম্বইয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় পাঁচ বছর কাজ করেছি। কখনও এমন সমস্যায় পড়তে হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘৮ নভেম্বরের নোটবন্দি আমাদের জীবন বদলে দিল। এক মাসের মধ্যে কাজ হারালাম। পাঁচশোর নোট বাতিল হওয়ায় শেষের যে একমাস কাজ করেছিলাম, তারও মজুরি বাবদ ১৪ হাজার টাকা দেয়নি ওই সংস্থা।’’ তাঁর অভিযোগ, এখন ফোন করলেও কোনও সাড়া মেলে না। ওই বকেয়া যে কবে পাওয়া যাবে কে জানে!

গ্রামেরই আর এক যুবক রাকিব শেখ বলেন, তিনি প্রায় চার বছর ধরে গোয়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেছিলেন। নোটবন্দির পর সেখানেও বহুতল তৈরিতে ভাটা। কাজ গিয়েছে তাঁরও। পাননি মজুরি। এখন এলাকায় কোনও নির্মাণ কাজ হলে কাজ করেন। মহেশপুরের এনামুল হক কাজ হারিয়ে মুম্বই থেকে ফিরে এসে এখন এলাকার বোম্বা মোড়ে চায়ের দোকান দিয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘নোটবন্দির পর মজুরির ১২ হাজার টাকা ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। আর যাইনি। চায়ের দোকান দিয়েই এখন কোনও মতে সংসার চলছে।’’

কালিয়াচকের তিনটি ব্লক জুড়েই এমন চিত্র। এখন যাঁরা ভিন রাজ্যে কাজে যাচ্ছেন, তাঁরা আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তাঁরা আগেই শ্রমিক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আগাম মজুরির টাকা নিয়ে রাখছেন। কয়েক জন আবার জানালেন, আগে যা মিলতো, এখন তা-ও নেই। কয়েকটি জায়গায় শিফ্টে দু’শো টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হচ্ছে। তাতেই কয়েক জন রাজি হয়েছেন।

প্রশাসন বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর করার আশ্বাস দিয়েছে। জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন