আলো আসায় উৎসব বক্সার গ্রামে

আজ সূর্যাস্তের অপেক্ষায় রেণু থাপারা। রাতের অন্ধকার নামলেই প্রথমবার আলো জ্বলবে ঘরে। ইলেকট্রিক আলো। আগেভাগেই রঙিন টিভি কিনে এনেছেন রেণু। তা দেখতে শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় উপছে পড়েছিল প্রতিবেশীদের।

Advertisement

নারায়ণ দে

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৫
Share:

বক্সা পাহড়ের সদর বাজারে বিদ্যুৎ আসায় খুশি বাসিন্দারা। — নিজস্ব চিত্র

আজ সূর্যাস্তের অপেক্ষায় রেণু থাপারা। রাতের অন্ধকার নামলেই প্রথমবার আলো জ্বলবে ঘরে। ইলেকট্রিক আলো। আগেভাগেই রঙিন টিভি কিনে এনেছেন রেণু। তা দেখতে শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় উপছে পড়েছিল প্রতিবেশীদের।এ দিন বাস্তুকাররা ঘরে ঘরে ঢুকে বিদ্যুতের সংযোগ পরীক্ষা করেছেন। সুইচ দেওয়া মাত্র টিভির পর্দায় আলো জ্বলে ওঠে। তাতেই হাততালি দিয়ে ওঠে কচিকাঁচারা। আজ শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সদর বাজার ও বক্সা দুর্গ সংলগ্ন গ্রাম দু’টিতে বিদুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। তার আগেই উৎসবের মেজাজ নিয়েছে পাহাড়ি গ্রামগুলি।

Advertisement

গত ৮ মাস ধরে বক্সা পাহাড়ের ১১টি গ্রামে চলছে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার কাজ। দুর্গম পাহাড়ি রাস্তায় খুঁটি পুতে আধুনিক বিদ্যুতের তার লাগানোর কাজ করে চলেছেন রাজ্য বিদুৎ পর্ষদের কর্মীরা। মাঝে বর্ষায় প্রায় তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল।

রাজ্য বিদুৎ বন্টন সংস্থার আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল ম্যানেজার শিবু সরকার বলেন, ‘‘বক্সা পাহাড়ের ১১টি গ্রামে বিদুৎ পৌঁছে দিতে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় চার কোটি চুয়ান্ন লক্ষ টাকা। দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম গুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া আমাদের কাছে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছিল। কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যই তা সম্ভব হল।’’ শুক্রবার সকালে সদর বাজার এলাকার বাসিন্দা রেনু শিবা থাপা বলেন, ‘‘এতদিন কার্যত আমরা অন্ধকারে থাকতাম। গ্রামে বিদ্যুৎ আসায় স্বামী গিয়ে আলিপুরদুয়ার শহর থেকে টিভি কিনে নিয়ে এসেছে। তবে এখন ডিশ অ্যান্টেনা সেট করা হয়নি।’’

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা অনুপ ছেত্রী বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার শহরে নানা কাজে যেতে হয়। সেখানে লোকে সারাক্ষণ স্মার্ট ফোনে কাজ সারে। সেখানে আমরা কার্যত অন্ধকার যুগে ছিলাম। সাধারণ মোবাইল চার্জ করার জন্য বিদুৎ সংযোগ ছিল না। ব্যাটারির মাধ্যমে মোবাইল চার্জ করতে হত। এ বার বড় দিনে সারা গ্রামে আলো জ্বলবে।’’ অঞ্জলি থাপা জানান, তার স্বামীও বিদুৎ সংযোগ আসায় পনেরো হাজার টাকা খরচ করে টিভি ও ডিশ অ্যান্টেনা কিনে এনেছেন। আগে গ্রামে দু’একটি বাড়িতে টিভি থাকলেও তা সবসময় চলত না। ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে ব্যাটারি গুলি সমতল থেকে চার্জ করে আনতে হত। বেশ কয়েক দিন টিভি দেখা বন্ধ থাকত।

এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ী প্রকাশ থাপা জানান, তাঁর একটি ছোট লজ আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পর্যটকদের মোবাইল ও ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ করতে অসুবিধে হত। এখন সেই সমস্যা মিটবে। এ দিন পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরতে দেখা যায় বিদুৎ বন্টন দফতরের সহকারী বাস্তুকার রৌনক করকে। তিনি বলেন, ‘‘ঘরে ঘরে মিটার বসে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা।’’ রাজাভাত খাওয়া অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অ্যালবার্ট সাংমা জানান দ্রুত বক্সা পাহাড়ের বাকি গ্রামগুলিতেও আলো জ্বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন