পরিচর্যা চলছে শ্রাবণীর। — নিজস্ব চিত্র
অস্ত্রোপচার পরে বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন। কড়া ডোজের ওষুধে ধুম জ্বরে ভুগতে শুরু করে শ্রাবণী। ওষুধ-অসুখে মিইয়ে পড়েছিল চার বছরের মেয়ে। শুরু হয় মাথা, কপাল, চোখের দু’পাশে নারকেল তেলের মালিশ। অবশেষে জ্বর কমেছে, খাওয়াদাওয়াও স্বাভাবিক হয়েছে। গরুমারার পিলখানায় এখন দিব্যি শুঁড় নেড়ে কলাগাছের পাতা চিবোচ্ছে চার বছরের হস্তিশাবক।
চলতি মাসের প্রথম দিনে গরুমারার জঙ্গলে সরস্বতী ঝিলের ধারে বুনো হস্তিশাবকটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন বনকর্মীরা। বাঁ পায়ে গভীর ক্ষত। তিরের ফলার লোহার অংশ ক্ষত স্থানে বিঁধে থাকতে দেখা যায়। বনকর্মীদের দাবি, তির বিঁধে জখমে কাতরে পড়েছিল শাবকটি, দু’চোখ দিয়ে নাগাড়ে জল গড়াচ্ছিল। দেরি না করে খবর দেওয়া হয় প্রাণী চিকিৎসকদের। তুমুল বৃষ্টিতেই অস্ত্রোপচার হয়।
বয়স অল্প তাই ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়তে ভরসা পাননি বনকর্মীরা। তিনটি কুনকি হাতি দিয়ে হস্তিশাবককে ঘিরে-বেঁধে রেখে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। একটি কুনকি হাতির পিঠে বসে ঝুঁকে পাশে দাঁড়ানো হস্তিশাবকের সামনের দিকের পায়ের উপরের অংশে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক। ক্ষতস্থান থেকে লোহা টেনে বের করে ফেলা হয়। দেওয়া হয় ব্যথা কমার ইঞ্জেকশন। সে দিন সন্ধ্যেতেই কুনকি হাতিরা শুঁড়-পা দিয়ে ঠেলে হস্তিশাবককে গরুমারায় পিলখানায় নিয়ে যায়। শ্রাবণ মাসের সোমবারে হাতিটি পিলখানায় ঢোকায়, বনকর্মীরা নাম রাখেন শ্রাবণী।
বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পিলখানাতে এসেও শরীর ভাল যাচ্ছিল না শ্রাবণীর। ব্যথা কমার ইঞ্জেকশন, পরের পর কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন-ওষুধে জ্বরে আক্রান্ত হয় শাবকটি। দশ ইঞ্চি গভীর ক্ষত থেকে বের হতে থাকে পুঁজরক্ত। তারপরেই মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে নারকেল তেল মালিশ করানোর সিদ্ধান্ত হয়। তাতেই সুস্থ হতে শুরু করেছে শাবকটি। গত শনিবার থেকে শুঁড় তুলে দিব্যি ছোটাছুটি করছে সে। কলাপাতা, চেপ্টি ঘাস এগিয়ে দিলেই শুঁড় দিয়ে টেনে মুখে পুরে দিচ্ছে। জ্বরও নেই। চিকিৎসক দীপক বার বলেন, ‘‘হাতিটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। পায়ে দশ ইঞ্চি ক্ষত হয়েছিল, সেটি শুকোতে কিছু সময় লাগবে। চিন্তার আর কোনও কারণ নেই।’’
তবে অন্য আশঙ্কায় রয়েছে বন দফতর। দল ছুট হয়ে গেলে শাবকদের বুনোর দল ফিরিয়ে নিতে চায় না বলে বনকর্মীদের দাবি। তবে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, ‘‘তেমন হলে হাতিটিকে তালিম দিয়ে বন দফতরের কাজে লাগানো হবে।’’ বনকর্মীরা জানিয়েছেন, আপাতত শ্রাবণী পিলখানাতেই থাকছে।