জমি জটে জড়িয়ে ছিটমহলের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনই প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কা করে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সে সমস্যা-সুরাহার পথ দেখাল ছিটের বাসিন্দারা।
শুক্রবার, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে চিঠি দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভারতীয় ছিটমহলের ১৪৯টি পরিবারকে ভারতীয় ভূখণ্ডে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিতে এগিয়ে এসেছেন ছিটের বাসিন্দারাই।
কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্তের দাবি, বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলের ৩৭,৩৬৯ জন বাসিন্দার মধ্যে ১৪৯টি পরিবারের ৭৪৩ জন বাসিন্দা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পরিবর্তে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী। কিন্তু তাঁরা এ দেশে পাকাপাকি ভাবে এলে বসত গড়বেন কোথায়? জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে অনড় রাজ্য সরকার তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জমি আন্দোলনের ‘আঁতুরঘর’ এ রাজ্য। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের জমি-বিল নিয়ে সরব। এ অবস্থায় জমি না মিললে ছিটের বাসিন্দাদের পুনর্বাসনই প্রশ্নের মুখে পড়বে।
সমস্যা মেটাতে ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে ১৬১টি পরিবার তাই ইতিমধ্যেই ১৫.৭ একর জমি নিঃশর্তে দান করেছেন। আরও অন্তত ৮৪.৩ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুনর্বাসনের জন্য, সেই নয়া বসতে রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে আরও ১০০ একর জমি। তাঁদের দাবি, খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল পাঠাতেও আবেদন করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয় ভারতে থাকা ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল এ দেশের সঙ্গে মিশে যাবে। আবার বাংলাদেশে থাকা ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল যুক্ত হবে সে দেশের সঙ্গে। অর্থাত্ আন্তর্জাতিক এই চুক্তির ফলে নাগরিকত্বই পাল্টে যাবে ভারতীয় ছিটমহলের ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশি ছিটমহলগুলির ১৪ হাজারেরও বেশি বাসিন্দার।
কিন্তু বাসিন্দারা যদি তা এই নাগরিকত্ব পরিবর্তনে রাজি না হন? ১৯৭৪-এর এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, তাঁরা চাইলে আগে যে দেশের নাগরিক ছিলেন, সে দেশে পুনর্বাসন পেতে পারেন। আর জটিলতা শুরু এখান থেকেই। ছিটমহল বিনিময় হলে কত জন নাগরিক এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে চান, ছিটমহলবাসীদের সংগঠন ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’-র কাছে তার একটা সাধারণ হিসাব জানতে চায় বাংলাদেশ প্রশাসন। এর পরেই কমিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা করা হয়।
ভারতে সমন্বয় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানেন, পুনর্বাসন চাওয়া ছিটমহলবাসীদের দায়িত্ব কে নেবে, কেন্দ্রের কাছে সে প্রশ্নেরই জবাব চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ছিটমহলের বাসিন্দারা সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে না থেকে নিজেরাই ও দেশ থেকে আসা ১৪৯টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই সরব হয়েছে তৃণমূল। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ছিট তেকে আসা মানুষজনকে পুনর্বাসনের প্রশ্নে জমিই যদি ফের বাধা হয়ে বসে?
সেই আবহে নিছক সহমমির্তার প্রশ্নে এগিয়ে আসেন ছিটের বাসিন্দারা। জমির প্রশ্নে তাঁদের নাগরিকত্বের স্বপ্ন যতে ফের না ধাক্কা খায় সে জন্যই স্বতপ্রণোদিত হয়ে জমি দিতে চান ছিটের বাসিন্দাদের একাংশ বলে জানাচ্ছেন দীপ্তিমান।
তিনি বলেন, জমি দেওয়ার পাশাপাশি, আগামী ৬ মাসের ভরণপোষণের দায়ও তাঁরা নিতে রাজি। পুনর্বাসনের পরে নব্য বাসিন্দাদের চিকিৎসার ব্যাপারেও ইতিমধ্যেই তাঁরা কথা বলেছেন রেড ক্রশ কিংবা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে।
স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাঁদের প্রশ্ন, এর পরেও কি জমি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে সরকার?