সরকারবাড়ির পুজোয় মাতে গ্রাম

বাড়িতে ঢোকার মুখেই লক্ষ্মীর থান। পাকাপোক্ত লক্ষ্মী মন্দির। সারা বছর পুজো হয় সেই মন্দিরে। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমায় বড়পুজো হওয়ার পরদিন থেকে তিনদিন ধরে বসে কবি গানের আসর। কবিদের দু’টি দল আসে ফালাকাটা এবং অসম থেকে।

Advertisement

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৩
Share:

সরকারবাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে ঢোকার মুখেই লক্ষ্মীর থান। পাকাপোক্ত লক্ষ্মী মন্দির। সারা বছর পুজো হয় সেই মন্দিরে। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমায় বড়পুজো হওয়ার পরদিন থেকে তিনদিন ধরে বসে কবি গানের আসর। কবিদের দু’টি দল আসে ফালাকাটা এবং অসম থেকে। তিন দিন ধরে প্রতি সন্ধ্যায় কবির লড়াই হয়। এভাবেই বরাবরের ঐতিহ্য মেনে লক্ষ্মীপুজো করে আসছেন হলদিবাড়ি থানার কাশিয়াবাড়ির জয়ন্তীনগর গ্রামের সরকার বাড়ির সদস্যরা।

Advertisement

জয়ন্তী নগর থেকে নির্বাচিত উত্তর বড়হলদিবাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য শ্রীপদ দাস বলেন, “আমাদের গ্রামের সরকার বাড়ির লক্ষ্মী পুজো এবং কবিগান নিয়ে যে আনন্দ হয় তা দুর্গাপুজোর থেকে বেশি। গ্রামের সবাই এই তিনটে দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন।”

জয়ন্তীনগর গ্রামের সরকাররা সাধারণ মধ্যবিত্ত। দুই ভাইয়ের যৌথ পরিবার। বড়ভাই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। ছোটভাই রতন সরকার জমিজমা দেখভাল করেন। আম, লিচু আর সুপারি গাছ দিয়ে ঘেরা বাড়ি। বাড়িতে ঢোকার মুখে একটা বড় প্রাঙ্গন। ডান দিকে একটা পাকা মন্দির। এই মন্দিরে প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর সময় নতুন মূর্তি এনে লক্ষ্মী পুজো করা হয়। নতুন মূর্তি আনার পর আগের মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়। তারপর সারা বছর ধরে প্রতিদিন লক্ষ্মী পুজো করা হয়। এই আশ্বিন মাসে নতুন মূর্তি বসানোর দিন বড় পুজো হয়।বিকেলে মূর্তি আনার পর গভীর রাত পর্যন্ত পুজো চলে।

Advertisement

এই লক্ষ্মী পুজোকে ঘিরে জয়ন্তীনগর গ্রামে হৈ হৈ পড়ে যায়। যে দিন সন্ধ্যায় লক্ষ্মী পুজো হয়, তারপর দিন থেকে বসে যায় কবিগানের আসর। সন্ধ্যায় শুরু হয়ে চলে রাত পর্যন্ত। এ বারও তার ব্যাতিক্রম নয়। আজ রবিবার ফালাকাটার ভুতনির ঘাট থেকে আসছেন মহেন্দ্র সরকার এবং অসমের বরপেটা রোড থেকে আসছেন বিনোদ সরকার। কবির লড়াই দেখার জন্য ছুটে আসেন হলদিবাড়ি শহর এবং শহর সংলগ্ন ছ’টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। তা ছাড়াও কাছের মণ্ডলঘাট, বেরুবাড়ি এলাকার বাসিন্দারাও আসেন। অনেকে রাতে ফিরতে পারেন না। তাদের জন্য সরকার পরিবারের তরফ থেকে নিখরচায় থাকা এবং খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। কবির লড়াই যাতে সবাই দেখতে পারেন সেজন্য সরকার পরিবারের পক্ষ থেকে সংলগ্ন এলাকার দশ কাঠা জমির পাকা ধান ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে।

সরকার বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো গত পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। একসময় গ্রামের বয়স্ক ব্যাক্তিরা মিলে কবির লড়াই এর পরিকল্পনা করেন। সেই থেকে কবি গানের আসর বসছে। পরিবারের সদস্য রতন সরকার বলেন, “আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও সেই পুরোন ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর সময় কবিগানের আসর বসানো হয়। হলদিবাড়ি এবং জলপাইগুড়ি থেকে বাসিন্দারা কবির লড়াই দেখতে ভিড় করেন।” লক্ষ্মীপুজোকে ঘিরে জয়ন্তীনগর গ্রামে একটি মেলাও বসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন