পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বর্ষায় চিনে রাখুন চাষের জমি

উত্তরবঙ্গে বর্ষাকালীন সব্জি চাষে সাফল্য পেতে জমি নির্বাচনের ব্যাপারে বাড়তি যত্নবান হতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরের সাত জেলা যদি বর্ষাকালীন চাষের জন্য ঠিকঠাক জমি নির্বাচন করা হয়, তা হলে ফসল ভাল হতে বাধ্য। উত্তরে পাহা়ড়ের মতো তরাই এবং সমতল অঞ্চল রয়েছে।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

কোচবিহারে ডুবে গিয়েছে বীজতলা। — নিজস্ব চিত্র

উত্তরবঙ্গে বর্ষাকালীন সব্জি চাষে সাফল্য পেতে জমি নির্বাচনের ব্যাপারে বাড়তি যত্নবান হতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, উত্তরের সাত জেলা যদি বর্ষাকালীন চাষের জন্য ঠিকঠাক জমি নির্বাচন করা হয়, তা হলে ফসল ভাল হতে বাধ্য। উত্তরে পাহা়ড়ের মতো তরাই এবং সমতল অঞ্চল রয়েছে। এক একটি এলাকায় এক এক ধরনের সব্জির চাষ ভাল হয়। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সে জন্য এলাকা অনুযায়ী সতর্কতা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে বৃষ্টির বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বত্র যে বর্ষাকালে এক ভাবে বৃষ্টি হবে, তা তো নয়।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জুন থেকে সেপ্টেম্বর— চার মাস বৃষ্টি হয় উত্তরবঙ্গে। কিন্তু সর্বত্র সমান ভাবে বৃষ্টি হয় না। আবার সব মাসে সমান বৃষ্টিও হয় না। ফলে কোনও মাসে বেশি বৃষ্টির জন্য সমস্যা হয়, কোনও মাসে আবার কম বৃষ্টির জন্য। এই হিসেব মাথায় রাখতে না পারলে বর্ষাকালে চাষের অর্থনীতিটাই ধাক্কা খাবে, দাবি তাঁদের।

উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জি ও মশলা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্ষাকালীন সব্জি-সহ সমস্ত চাষাবাদের ক্ষেত্রেই জমি বাছাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তরাই এলাকায় অপেক্ষাকৃত উঁচু ও ঢালু জমিতে চাষ করা হলে বর্ষায় ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে। পাহাড়ের ক্ষেত্রেও ঢালু জমি বাছাই করতে হবে। বাকি সমতল এলাকায় জমি কিন্তু ভাল।’’ উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ কৃষি মৌসম সেবা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত কয়েক বছরের বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান যাচাই করে দেখা গিয়েছে বর্ষায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি কমেনি। কিন্তু বৃষ্টিপাতের দিন কমেছে। কয়েক দিন হয়তো টানা ভারী বর্ষণ হল। আবার তার পরে বৃষ্টির দেখা নেই।’’ তাঁর বক্তব্য, ভাল ফসলের জন্য সমান বৃষ্টিপাত খুব জরুরি।

Advertisement

বর্ষাকালে কেন উত্তরের জেলাগুলিতে জমি বাছাইয়ের ব্যাপারে বাড়তি যত্নবান হওয়া দরকার? কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কৃষি মানচিত্রে উত্তরের জেলাগুলিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, দার্জিলিঙের মতো পাহাড়ি এলাকা। দ্বিতীয়ত, কোচবিহার, জলপাইগু়ড়ি, আলিপুরদুয়ারের মতো তরাই অঞ্চল। তৃতীয়ত, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহের সমতল এলাকা। বর্ষায় পাহাড়ে স্কোয়াশ, আদা, হলুদ, পিচ, বিনস, বরবটি প্রভৃতি চাষের প্রবণতা রয়েছে। সেখানে বর্ষায় গড়ে বৃষ্টিপাত হয় ১৭০০ মিলিমিটারের মতো। এই সময় ধস ও ভূমিক্ষয়ের আশঙ্কাও থাকে। তাই পাহাড়ের ঢালু এলাকায় চাষ করা হলে ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটাই কমে।

তরাই অঞ্চলে বর্ষাকালীন সব্জি চাষের তালিকায় বেগুন, লঙ্কা, পটল, ঝিঙে, ইত্যাদি রয়েছে। এই সময় ভারী বৃষ্টি হলে এবং তার ফলে ২৪ ঘণ্টা জল জমে থাকলে গোড়াপচা, কন্দপচা রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। তা ছাড়াও ছত্রাক ঘটিত সমস্যা, রোগ পোকার আক্রমণের সমস্যাও হতে পারে। সমস্যা এড়াতে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে ঢাল তৈরি করে চাষ করা দরকার। সেখানে বৃষ্টির জল দাঁড়াতে পারবে না।

দক্ষিণের তিন সমতল জেলাতেও তরাইয়ের মতোই সব রকম সব্জি চাষের সুযোগ রয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে সেচ ব্যবস্থা ভাল করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। এক কৃষি বিশেষজ্ঞের কথায়, তিন জেলায় তুলনামূলক ভাবে কম বৃষ্টি হয়। তা-ও আবার নিয়মিত নয়। ফলে জলধারণ ক্ষমতা বেশি রাখতে সেচের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যিক।

ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রের খবর, উত্তরের জেলাগুলিতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার সব্জির ব্যবসা হয়। বর্ষার মরসুমে চাষাবাদে ক্ষতি হলে সব্জির জোগান কমে যায়। ফলে বাজারে দাম বেড়ে যায়। পুরো বর্ষাকাল মোটামুটি সমান ভাবে বৃষ্টি হলে হলে ওই সম্ভবনা কম থাকবে। ফোসিনের সদস্য রানা গোস্বামী বলেন, “উত্তরের জেলাগুলিতে কয়েক লক্ষ বাসিন্দা কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীর সংখ্যাও লক্ষাধিক। এখনও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে তাদের লাভ-লোকসান নির্ভর করছে। তাই পরিকল্পনা দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন