নকল: একই নম্বরের তিনটি পাঁচশোর নোট। নিজস্ব চিত্র
এটাও এক ধরনের ‘ছন্দে’ ফেরা!
মাস ছ’য়েক আগে সীমান্তের গ্রামগুলোর যে যুবকরা হাতে দামী অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াত, নোট বাতিলের পরে জাল নোটের কারবারে ভাঁটা পড়ায় তাদের ভাঁড়ারেও টান পড়ে। ঠাঁটবাট শিকেয় তুলে দিনমজুরি বা একশো দিনের কাজ করছিল তারা। কেউ পাড়ি দেয় ভিন রাজ্যে। কিন্তু কালিয়াচক আবার পুরোনো ‘ছন্দে’ ফিরছে। শুরু হয়েছে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে মুঠো মুঠো জাল নোট আনা। তারপরে কখনও হাটে-হাটে গিয়ে মিশিয়ে দেওয়া।
কখনও নানা কায়দায় দেশের নানা জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। মালদহের কালিয়াচকের সীমান্তবর্তী গ্রামে ঘোরাঘুরির পরে যে সব ছবি চোখে পড়ে তা জুড়লে এমনই মনে হচ্ছে অনেকের। পুলিশ-প্রশাসন ও পঞ্চায়েতের অনেকেই শঙ্কিত। নতুন জাল নোটের কারবারে ইতিমধ্যে কালিয়াচকের ৪ জন গ্রেফতারও হয়েছে। বিএসএফ ও এনআইএ কর্তাদেরও দাবি, পুরোনো কারবারীদের হাত ধরেই ওপার থেকে আসা জাল নোট ফের এপারে ছড়ানোর কারবার শুরু হয়েছে।
কালিয়াচক থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই গোলাপগঞ্জ. আর গোলাপগঞ্জ থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই সীমান্ত ঘেঁষা মহব্বতপুর। মহব্বতপুরকে দু’ভাগ করে রেখেছে কাঁটাতারের বেড়া। আর এই ভৌগোলিক অবস্থানই মহব্বতপুরকে জাল নোট পাচারের কাজে কার্যত শিরোনামে নিয়ে আসে বলে প্রশাসনের অনেকের ধারণা।
আগে জাল নোট পাচারের ‘দর’ ছিল কুড়ি হাজারে তিনশো। আর এখন নাকি নতুন দু’হাজারি নোট আসায় কুড়ি হাজারে মিলছে পাঁচশো। একই চিত্র গোলাপগঞ্জের পুব দিকের ষষাণি গ্রামেরও। সেখানেও কাঁটাতারের বেড়ার ঠিক গা ঘেঁষেই রয়েছে ভারতেরই গ্রাম রাজবংশী পাড়া। অভিযোগ, রাতে সেই গ্রাম থেকেও চলে নোট পাচারের কারবার। কালিয়াচক ৩ ব্লকের কাঁটাতার ঘেরা চরঅনন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দুইশত বিঘি, মোহনপুর, পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শোভাপুর, বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুর, দৌলতপুর, আকন্দবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শবদলপুর, মিলিক সুলতানপুর, গোলাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের চকমাইলপুর, খড়িবোনা, গোপালপুর এ সব গ্রামের নামও জাল নোট নিয়ে তদন্তে বারবার উঠে এসেছে।
সুকদেবপুরের বেশ কিছু এলাকায় আবার কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় কারবারের বহরও বেশি। এ সব গ্রামের যুবক থেকে শুরু করে শতাধিক লোক জাল নোটের কারবারের অভিযোগে কখনও পুলিশ, কখনও বিএসএফ বা কখনও এনআইয়ের হাতে গ্রেফতারও হয়েছে।
(চলবে)