সারাদিন হাঁড়ি চড়েনি শোকগ্রস্ত ৬ পরিবারে

গত সোমবার উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে বেসরকারি মোবাইল পরিষেবার নেটওয়ার্কের কেবল পাতার ২৫ ফুট গর্তে মাটি কাটার একটি যন্ত্র বিকল হয়ে যায়। সেটি তুলতে ওই গর্তে নামেন নাজিমুদ্দিন হক, মহিরুল, নাজমুলরা ছয় জন। আচমকা মাটি ধসে চাপা পড়ে ওই ছয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

Advertisement

গৌর আচার্য

ইটাহার ও রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

শোক: কেঁদেই চলেছেন কওসরের স্ত্রী। বিহ্বল সন্তানেরা। ইটাহারে। নিজস্ব চিত্র

সারা গ্রামই ভেঙে পড়েছিল নাজিমুদ্দিন, মহম্মদ হাসান আলি, কওসর আলিদের বাড়ি। সব বাড়িতেই কেউ না কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন। তাঁদের পরিজনেরাও সমান শোকার্ত।

Advertisement

গত সোমবার রাতে মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন নাজিমুদ্দিনের পরিবারের লোকেরা। শোকস্তব্ধ হয়ে কেটেছে দুই দিন। কারও বাড়িতে হাঁড়ি চড়ছে না। প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে সারাদিন ধরে ছিল অপেক্ষা। অভুক্ত পরিবারগুলোয় থেকে থেকে শিশুদের কান্নায় রোল সমানেই ভেসে আসছিল। পাজোল, বাড়িওল, রায়গঞ্জের গৌরী এবং বাহিন এলাকায় মৃতদের পরিবারে এ দিন দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য।

পাজলের কওসরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুপসানা বিবি অঝোরে কেঁদেছেন। দুই মেয়ে পাঁচ বছরের কাশ্মীরা, দুই বছরের রূপাকে কে দেখবে সেই চিন্তা। একটা বাড়ির পরেই কওসরেরর চাচার ছেলে নাজিম ওরফে নাজিমুল হকও একই ঘটনায় মারা গিয়েছে। তাঁর স্ত্রী সাজিনূর দুই ছেলে আট বছরের সায়িম আলি এবং পাঁচ বছরের সাকিরকে নিয়ে শোকে কাতর। কওসরের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘‘গ্রামে কাজ নেই। বাইরে কাজ করতে যাচ্ছে গ্রামের ছেলেরা। না করতে পারি না। কাজ কারবার না হলে চলবে কী করে? বৌমা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ওকে দেখতে শীঘ্রই আসবে বলেছিল কওসর।’’

Advertisement

গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের এলেঙ্গিয়ায় নাজিমুদ্দিন ওরফে হাবু, মহিরুল হক এবং বাহিন গ্রাম পঞ্চায়েতের ট্যাগায় নাজমুলের বাড়িতে। এলাকার তিন যুবকের মৃত্যুর ঘটনার পর তিন দিন পেরিয়েছে।

গত সোমবার উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে বেসরকারি মোবাইল পরিষেবার নেটওয়ার্কের কেবল পাতার ২৫ ফুট গর্তে মাটি কাটার একটি যন্ত্র বিকল হয়ে যায়। সেটি তুলতে ওই গর্তে নামেন নাজিমুদ্দিন হক, মহিরুল, নাজমুলরা ছয় জন। আচমকা মাটি ধসে চাপা পড়ে ওই ছয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

নাজিমুদ্দিনের স্ত্রী ফতেমা এদিনও আক্ষেপ করেন, ‘‘গর্তে নামার আগে স্বামী বিপদের আঁচ পেয়ে আমাকে ফোন করেছিলেন। তখনই নামতে নিষেধ করলে পাঁচ বছরের ছেলে ও দেড়বছরের মেয়েকে নিয়ে স্বামীহারা হতে হত না।’’ মৃত মহিরুল ও নাজমুলের বাড়িতে এ দিন সকাল থেকে কান্নার রোল পড়েছে। বাড়ির সামনে ভিড় করেছেন পড়শিরা। ছেলের শোকে ঘনঘন জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ মহিরুলের মা ময়রম বিবি। পরিবারের লোকজন বহু চেষ্টা করেও তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি।

মহিরুলের বাবা করিমুল হকের আফসোস, ‘‘আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও মহিরুল বরেলীতে কাজে গিয়েছিল।’’ নাজমুলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে গত সোমবার রাত থেকে তাঁর স্ত্রী জোবেদা খাতুন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

রায়গঞ্জের বিডিও অনুরাধা লামা, ইটাহারের বিডিও রাজু লামা মৃতদের বাড়ি যান। সরকারের তরফে সমবেদনা প্রকল্পে দুই হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের উদ্যোগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরেলী জেলা প্রশাসনের দেওয়া দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে রায়গঞ্জ ও ইটাহারের উদ্দেশ্যে মৃতদেহগুলি রওনা হয়। সৎকারের জন্য পরিজনদের হাতে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

(সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র কুণ্ডু)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন