ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও উঠেছে
Paddy Selling Drive

‘ঝামেলা এড়াতে’ ধান বিক্রি ফড়েদের কাছেই

জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক সঞ্জীব হালদারের বক্তব্য, “সরকারি সহায়ক দরে ধান বিক্রির প্রক্রিয়ায় অনেক সরলীকরণ করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ, চাকুলিয়া শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:২৪
Share:

কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে জড়ো করে রেখেছেন ফড়েরা। বুধবার চাকুলিয়া হাটে। নিজস্ব চিত্র।

সামনে বৈদ্যুতিন ওজন মাপার যন্ত্র। পাশে কয়েক কুইন্টাল ধানের স্তূপ। কৃষকেরা ভুটভুটিতে করে ধানের বস্তা নিয়ে সেখানে হাজির হচ্ছেন। এর পরে ক্রেতা সেই ধানের বস্তা ওজন মাপার যন্ত্রে তুলে তা মেপে কৃষকের হাতে ধান বিক্রির দামবাবদ টাকা তুলে দিচ্ছেন। বুধবার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়া হাটের দৃশ্য। অভিযোগ, সরকারি সহায়ক দরে কৃষকদের ধান বিক্রি চলাকালীন, হাটে এ দিন গোয়ালপোখর ২ ব্লকের বহু চাষি এ ভাবেই ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করেছেন। মহম্মদ আলি নামে এক ফড়ের দাবি, “কুইন্টাল প্রতি ১,৭৫০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছি। তবে আমরা কারও কাছ থেকে জোর করে ধান কিনছি না।” ফড়েদের দাবি, তাঁরা ওই ধান পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে কুইন্টাল পিছু দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি করবেন।

Advertisement

জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক সঞ্জীব হালদারের বক্তব্য, “সরকারি সহায়ক দরে ধান বিক্রির প্রক্রিয়ায় অনেক সরলীকরণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কোনও কৃষক অসচেতন থেকে যদি নিজের ক্ষতি করে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করেন, তবে আমাদের কিছু করণীয় নেই।”

ধান বিক্রিতে ফড়ে-রাজ রুখতে কিছুদিন আগে জেলা জুড়ে বিভিন্ন হাটে সাদা পোশাকে নজরদারি শুরু করেন পুলিশ ও দুর্নীতি দমন শাখার কর্মীরা। প্রশাসন সূত্রের দাবি, সে নজরদারিতেই জেলা জুড়ে বিভিন্ন হাটে ফড়েদের বিরুদ্ধে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি সহায়ক দামের থেকে কম দামে ধান কেনার অভিযোগ জানতে পেরেছেন খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কর্তারা। ইতিমধ্যেই ওই দফতরের তরফে জেলার ন’টি ব্লকে মাইক-যোগে কৃষকদের সরকারি সহায়ক দরে ধান বিক্রি করে বেশি লাভ পাওয়ার বিষয়ে প্রচারও শুরু হয়েছে।

Advertisement

বর্তমানে জেলার ন’টি ব্লকের সমস্ত কিসান মান্ডিতে প্রতি কুইন্টাল ধান ২,২০৩ টাকা (পরিবহণ খরচ-সহ) সরকারি সহায়ক দরে কেনার কাজ চলছে। তার মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, জেলার বিভিন্ন হাটে কুইন্টাল প্রতি কোথাও ১,৭৫০, কোথাও আবার ১,৮০০-১,৮৫০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ফড়েরা ধান কিনছেন। রায়গঞ্জের বামুনগ্রামের কৃষক ধনঞ্জয় দেববর্মণ রায়ের বক্তব্য, “সরকারি সহায়ক দরে ধান বিক্রির তারিখ পেতে অনেক ঝামেলা। তা ছাড়া, ধানের মান খারাপের যুক্তি দেখিয়ে প্রতি কুইন্টালে সাত থেকে ১০ কেজি অতিরিক্ত ধান নেওয়া হয়। ঝামেলা এড়াতে আমি প্রতি ১,৮৫০ টাকা দরে স্থানীয় হাটে ৫০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করেছি।’’

জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের আধিকারিকদের দাবি, কৃষকদের কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করার বিষয়ে গ্রামে-গ্রামে প্রচার চলছে। সরকারি জায়গায় ধান বেচতে কোনও সমস্যা হলে, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হচ্ছে।

অন্য দিকে, ধান ক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা নিয়েও জেলায় প্রশ্ন উঠেছে। চাকুলিয়াতে একটি মাত্র শিবির রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের। তাঁদের দাবি, ধান কেনার জন্য প্রয়োজনে একাধিক অস্থায়ী শিবির করা হোক। তা না হলে, দূরত্বের কারণে তাঁরা ফড়েদের কাছে অল্প দামে ধান বিক্রি করতে এক প্রকার বাধ্যই হচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গোয়ালপোখর ২ ব্লকে রয়েছে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ব্লকের চাকুলিয়া বিএল আর ও অফিসের সামনে রয়েছে সরকারি স্থায়ী ধান ক্রয় কেন্দ্র। এখান থেকে ব্লকের সূর্যাপুর ১ ও ২ এবং তরিয়াল পঞ্চায়েতের দূরত্ব ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার। সাহাপুর এলাকার দুরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ওই এলাকাগুলিতে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয়। ফলে, বাজার সংলগ্ন এলাকার কৃষকেরা সেখানে ধান বিক্রি করতে পারলেও, দূরের এলাকাগুলি থেকে ক্ষুদ্র চাষিরা আসতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।

তাজিমুল আলম নামে তরিয়ালের এক কৃষক বলেন, ‘‘চাকুলিয়া থেকে আমার বাড়ি প্রায় ১৫ কিলোমিটার। চার-পাঁচ বস্তা ধান সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে গেলে যে খরচ হবে, তাতে ধান বেচে লাভের মুখ দেখতে পাব না।’’ বিলাসপুরের গ্রামের কৃষক খগেন সিংহ বলেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে কৃষক বাজারের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। গাড়ি করে ধান নিয়ে যেতে অনেক খরচ হয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ফড়েদের কাছে অল্প দামে ধান বিক্রি করে দিই।’’ সূর্যাপুরের কৃষক সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘‘সমবায়, স্বনির্ভর দলগুলি এখনও ধান কিনতে নামেনি। সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে গেলে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’’

জেলা খাদ্য নিয়ামক আধিকারিক সঞ্জীব হালদার বলেন, ‘‘গত বছর জেলায় ১৫টি ধান কেনার শিবির করা হয়েছিল। এ বার ১৯টি শিবির করা হয়েছে। চাকুলিয়া আরও শিবির করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন