বাবার মৃত্যু, তবুও বোনকে দাদা পাঠালেন পরীক্ষায়

কেউ মাত্র এক ঘণ্টা আগে মা হয়েছেন। কেউ এক দিন আগে হারিয়েছেন বাবাকে। তারপরেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন মালদহের রতুয়ার রুবিনা খাতুন থেকে কালিয়াচকের গয়েশবাড়ির মাসুমা খাতুন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৬
Share:

মেয়ে। বাবার কথা মনে রেখেই বুধবার পরীক্ষা দিলেন মাসুমা। নিজস্ব চিত্র

কেউ মাত্র এক ঘণ্টা আগে মা হয়েছেন। কেউ এক দিন আগে হারিয়েছেন বাবাকে। তারপরেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন মালদহের রতুয়ার রুবিনা খাতুন থেকে কালিয়াচকের গয়েশবাড়ির মাসুমা খাতুন।

Advertisement

সোমবার রাতে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন মাসুমার বাবা হাজি তাজামুল হোসেন। পরিবারের লোকেরা রাতেই তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি। মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালেই বাবা মারা যান। সারা বাড়ি ভেঙে পড়ে শোকে। তারপরেও বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের দর্শন পরীক্ষায় দিলেন মাসুমা।

তাজামুল চেয়েছিলেন, তাঁর সন্তানেরা পড়াশোনায় ভাল হোক। মাসুমার এক আত্মীয় জানান, বাবার কথাতেই উৎসাহ পেয়েছে ওই ছাত্রী। তাজামুলের পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের সব থেকে ছোট আদরের মেয়ে মাসুমা। নয়মৌজা হাই স্কুলের এই ছাত্রীর উচ্চমাধ্যমিকে সিট পড়েছিল বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরের জালালপুর হাই স্কুলে। মাসুমার মেজদাদা মোবারক বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পর মাসুমা একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। মঙ্গলবার সারা দিন ও বই খোলেনি। কিন্তু শেষ পরীক্ষাটা ও মনের জোরে দিল।’’ মোবারকই মোটরবাইকে করে বোনকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেন। মাসুমা বলেন, ‘‘মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলাম বলে বাবা যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন। পরীক্ষা দিতে বসে বারবার বাবার কথাই মনে পড়েছে।’’

Advertisement

রতুয়ার রুবিনার মনে পড়ছিল সন্তানের কথা। বাবলাবোনা এলাকায় বাড়ি রুবিনার। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হতে মঙ্গলবার রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সকাল ন’টায় পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। অবসন্ন শরীরে যন্ত্রনা নিয়েই টানা তিন ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা দিয়েছেন খাঁপুর হাই মাদ্রাসার কলা বিভাগের ছাত্রী রুবিনা। গত বছর বিয়ে হয়েছে তাঁর। তারপরে পড়াশোনা করে গিয়েছেন। রুবিনার বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা না দিলে একটা বছর নষ্ট হত। সেই জন্যই যক কষ্টই হোক, পরীক্ষা দিয়েছি।’’ তাঁজর পাশে রয়েছেন তাঁর স্বামীও।

দু’দিনের সদ্যোজাতকে নিয়ে এ দিন পরীক্ষা দিয়েছেন চণ্ডীপুর হাই স্কুলের রুনা লায়লা। মঙ্গলবার ভোর চারটায় হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতালে ছেলেকে পাশে নিয়ে পরীক্ষা দেন রুনা।

সদ্যোজাতকে নিয়ে নার্সিংহোমে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন কোচবিহারের ছাত্রী অঞ্জু বর্মনও। শনিবার তিনি মা হন। একদিনের সদ্যোজাতকে নিয়ে পরীক্ষা দিলেন ইটাহারের জয়হাটের মাজিরুন খাতুনও। বুধবার ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই ছাত্রী দর্শন বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন