বন্দুক ফেলে পালাল পুলিশ

ছেলের দেহ মিলতেই উধাও বাবা

সোমবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছেলের খোঁজ পেতে গ্রামের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটতে দেখা গিয়েছিল উৎকণ্ঠিত বাবাকে। কিন্তু ছেলের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই বেপাত্তা বাবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

শোকার্ত পরিজনেরা।

সোমবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছেলের খোঁজ পেতে গ্রামের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটতে দেখা গিয়েছিল উৎকণ্ঠিত বাবাকে। কিন্তু ছেলের মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই বেপাত্তা বাবা। কালিয়াচকের নওদা যদুপুরের স্কুল ছাত্র সাবির মোমিনের খুনের ঘটনার পর থেকেই আর খোঁজ মিলছে না তার বাবা ইব্রাহিম মোমিনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ছেলের শেষকৃত্যেও দেখা যায়নি তাঁকে।

Advertisement

যদিও পরিবারের দাবি, গ্রামেই রয়েছেন ইব্রাহিম। নিরীহ ছেলে নৃশংস ভাবে খুন হয়ে যাওয়ায় বাড়ির অন্য আত্মীয় স্বজনদের মতোই, মুষড়ে পড়েছেন তিনি। তাই এক জায়গায় স্থির থাকতে পারছেন না।

কালিয়াচক থানার নওদা যদুপুর গ্রামপঞ্চায়েতের ভাগলপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম শেখ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি পেশায় জমি ব্যবসায়ী। তাঁর তিন ছেলে রয়েছে। তাদের মধ্যে সাবির মোমিনই ছিল বড়। সে দড়িয়াপুর বাইশী হাই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাড়ির পাশের একটি দোকানে বসে মোবাইল ফোন নিয়ে খেলছিল। এ সময় বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা বকুল শেখের নেতৃত্বে পাঁচ জনের একটি দল তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ওই সময় ইফতারের প্রস্তুতি চলায় রাস্তাঘাট কার্যত শুনসান ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। ব্যাপারটি জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় গ্রামে। ছেলের খোঁজ পেতে ছোটাছুটি শুরু করেন ইব্রাহিম শেখ। কখনও ছুটে যান যদুপুর বাজারে। কখনও বকুলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা জাকির শেখের বাড়িতে ছুটে যান।

Advertisement

এ দিন রাত একটা নাগাদ গ্রামেরই একটি আম বাগান থেকে উদ্ধার হয় ইব্রাহিমের বড়ো ছেলে সাবিরের মৃতদেহ। তাকে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ সাবিরের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বিকেল চারটে নাগাদ ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে আসা হয়। তারপর গ্রামেই শেষকৃত্য হয়। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছিলেন, ইব্রাহিম ছেলের মৃতদেহ আনতে মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছে। কিন্তু কোনও জায়গাতেই তাঁর দেখা মেলেনি।

প্রশ্ন ওঠে কেন আচমকা বেপাত্তা হয়ে গেলেন ইব্রাহিম। পুলিশ জানিয়েছে, ইব্রাহিম মোমিনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, বোমাবাজি, তোলাবাজি সহ ছ’টি ধারায় মামলা রয়েছে। পুলিশের খাতাতেও ফেরার। তাই গ্রেফতারের আশঙ্কায় গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারেন বলে অনুমান পুলিশের। নিরীহ স্কুল ছাত্রের খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানান, গত ডিসেম্বর মাসে বকুল শেখের স্কুল পড়ুয়া ছেলে মহম্মদ আজিম আলমকে লক্ষ্য করে গুলি করে জাকিরের অনুগামীরা। যদিও কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছিল আজিম। ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল ইব্রাহিম শেখের। এ দিনের ঘটনা তার পাল্টা নয়তো? প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তবে পুরো ঘটনায় আতঙ্কিত তারা।

মৃত সাবিরের মা আজেদা বিবির আক্ষেপ, ‘‘এখানে লড়াই বকুল আর জাকিরের মধ্যে। তাদের লড়াই মরতে হল আমার নিরীহ ছেলেকে। যাঁরা আমার ছেলেকে মেরেছে আমি তাঁদের প্রত্যেকের শাস্তি চাই।’’ নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন