বেলা এগারোটার আগেই অনেকে রিমোট ঘুরিয়ে ‘লোকসভা চ্যানেল’ চালু করলেন। অনেকে আবার স্থানীয় ক্লাব ঘরে জমায়েত হলেন। কোথাও পাতপেড়ে পিকনিকের মেজাজে খিচুরি খাওয়া হল। কোথাও মিষ্টি বিলি হল, কোথাও চলল লাড্ডু বিলি।
সব মিলিয়ে ‘ঘরের ছেলে’ পার্থপ্রতিম রায়কে লোকসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিতে দেখতে উৎসবে মাতল কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম জিরানপুর। বুধবার বেলা এগারোটায় লোকসভার অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের কাজ শুরু হয় কোচবিহারের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ পার্থবাবুর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে।
লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এ দিন তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান। লোকসভায় সে সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেসের সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী, তৃণমূলের পরিষদীয় দলনেতা সুদীপ বন্দোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সির মতো তাবড় নেতারা। গ্রামের ছেলেকে দেশের এমন তারকা রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেখে বাড়তি উচ্ছ্বাসে মাতেন বাসিন্দারা।
সাংসদ হিসেবে পার্থবাবুর শপথ শেষ হতেই দর্শকেরা হাততালি দিতে শুরু করেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “শপথ নিতে যাওয়ার আগে পার্থ আমাকে ফোন করেছিল। সত্যিই ওর জন্য আমার গর্ব হচ্ছে। দারুণ আনন্দ হচ্ছে।”
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্থবাবুর দেওয়া স্ট্যাটাসেই জানাজানি হয়ে গিয়েছিল এ দিন তিনি শপথ নেবেন। তাই রাতেই ওই অনুষ্ঠান ঘিরে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। জিরানপুরের মোয়ামারি এলাকার একটি ক্লাবে টিভি বাইরে বসানো হয়। সেখানেই ঘরের ছেলের ‘লাইভ’ শপথ দেখতে ভিড় জমান বাসিন্দাদের অনেকে।
ক্লাবের সম্পাদক উজ্জ্বল রায় বলেন, “আমাদের এলাকা থেকে আগে কেউ লোকসভায় যাননি। তাই এ দিন টিভিতে পার্থদার শপথ দেখার অনুভূতিটাই আলাদা। অনেকেই শপথ দেখতে ভিড় জমান। লাড্ডু বিলি হয়।”
জিরানপুরে আমতলি এলাকায় তখন অবশ্য টিভিতে শপথ দেখার পাশাপাশি খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় চলছিল। টিভিতে শপথ শেষ হতেই শুরু হয় হাততালির রোল। উদ্যোক্তাদের তরফে গৌতম বর্মন বলেন, “এমন একটা দিনে একটু হইচই না করলে চলে।” জিরানপুর বাজারে সন্ধেয় মিষ্টি বিলি হয়। এলাকার যুবক সমীর বর্মন বলেন, “দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইছেন গ্রামের সবাই। আমরাও মিষ্টি বিলি করেছি।”
খুশির হাওয়া পার্থবাবুর পরিবারেও। ছেলে প্রাচুর্যকে নিয়ে টিভিতে শপথ দেখার পর সাংসদের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা নারায়ণ বলেন, “খুব ভাল লাগছে। পরে ফোন করেও ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।” পার্থবাবুর বাবা সুরেশচন্দ্র রায়, মা মধুবালা বর্মনও ছেলের শপথ টিভিতে দেখেন। মা পরে পুজোও দেন।
যাকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাস, জিরানপুরের বাসিন্দা সাংসদ পার্থবাবু বলেন, “সকলের ভালবাসায় আমি আপ্লুত। ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের মাধ্যমে বেশি বরাদ্দ, নদী ভাঙন রোধ, সাবেক ছিটমহল ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের নেতা সুদীপ বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। দলের নির্দেশ মতো কাজ করব।”