সংক্রান্তিতে পুজো টেনশন ঠাকুরের 

পুজো কমিটির সম্পাদক গণেশ অধিকারী, যতীন বর্মণ, বাবুদেব বর্মণরা জানান, এই এলাকায় অভাব ঘরে ঘরে। যুবকদের চাকরি নেই, ফসলের দাম নেই। সকলেই উদ্বেগ বা টেনশনে থাকেন। সে কারণে সকলে মিলে গ্রামের ওই মোড়ে বসে টেনশন দূর করার উপায় খুঁজতে শুরু করেন।

Advertisement

সজল দে  

মেখলিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০৩:৫৭
Share:

আয়োজন: পুজো চলছে টেনশন ঠাকুরের। —নিজস্ব চিত্র

চেনা রুটিনের বদল ঘটেছে আজ। সকাল থেকেই গ্রামের মোড়ের মাথায় জটলা। তার মধ্যেই কে একজন বললেন, ‘‘এত টেনশনের কিছু নেই। টেনশন ঠাকুর সব ঠিক করে দেবেন।’’

Advertisement

মেখলিগঞ্জ থেকে হেলাপাকড়ি হয়ে ময়নাগুড়ি যাওয়ার রাস্তায় ৭৬ নিজতরফ এলাকার ভেড়বেড়ি মোড় এলাকায় নতুন এই ‘ঠাকুর’-এর ‘আবির্ভাব’ ঘটেছে বছর তিনেক আগেই। নাম ‘টেনশন ঠাকুর’। এলাকাটি কৃষিপ্রধান। যত দিন গিয়েছে, ভক্তের সংখ্যা বেড়েছে।

শুরুটা কিন্তু অন্য রকম ছিল। পুজো কমিটির সম্পাদক গণেশ অধিকারী, যতীন বর্মণ, বাবুদেব বর্মণরা জানান, এই এলাকায় অভাব ঘরে ঘরে। যুবকদের চাকরি নেই, ফসলের দাম নেই। সকলেই উদ্বেগ বা টেনশনে থাকেন। সে কারণে সকলে মিলে গ্রামের ওই মোড়ে বসে টেনশন দূর করার উপায় খুঁজতে শুরু করেন। শেষে এলাকাবাসীর মঙ্গলকামনায় পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কিন্তু সিদ্ধান্ত হলে কী হবে, এলাকাবাসীর মূল সমস্যা তো টেনশন! আর পুরাণে নানারকম দেবতা থাকলেও টেনশন দূর করার কোনও দেবতা নেই বলে তাঁদের দাবি। সে কারণে টেনশন দেবতা নামেই নতুন এই দেবতা তৈরি করে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Advertisement

মূর্তি গড়ার দায়িত্ব বর্তায় গ্রামেরই মৃৎশিল্পী যোগেশ বর্মণের উপর। স্থানীয়দের পরামর্শে যোগেশবাবু একটি পাথরকে বেদীর উপর স্থাপন করেন নতুন এই দেবতার রূপ দেন। দেবতার মস্তক ও কণ্ঠদেশের কিয়দংশ দৃশ্যমান। আঁকা হয় দেবতার চোখ, নাক, মুখ ও গোঁফ। গাত্র বর্ণ গোলাপী, বেদির রং লাল। নতুন দেবতা তৈরির পর জ্যৈষ্ঠের সংক্রান্তিতে ধুমধাম করে শুরু হয় পুজো। শুরু থেকেই পুজোর দায়িত্ব পালন করে আসছেন রাজবংশী সমাজের পুরোহিত ভুপাল অধিকারী। পুজোয় ঢাক বাজে, উলুধ্বনি দেওয়া হয়। নৈবেদ্য খিচুড়ি। শেষ বিকেলে পুজো শুরু হয় এবং শেষ হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। এই পুজোয় আগে থেকে কোনও প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। পুজোর দিনেই সব জোগাড় করা হয়।

রবিবার ছিল সেই জ্যৈষ্ঠের সংক্রান্তি। সে কারণে এদিন সকাল থেকে ঠাকুর রং থেকে পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। পুজো পরিচালনার মূল দায়িত্বে যিনি সামলান স্থানীয় ভাষায় তাকে 'মারেয়া' বলা হয়। এবছরের মারেয়া দেবারু বর্মণ জানান, পুজোয় যোগ দেন বহু লোক। পুজোকে কেন্দ্র করে এই দিনটা কেটে যায় টেনশন ছাড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন