মেজাজ চড়ল উদয়নেরও

ভোট শুরু হওয়ার মুখে। সকাল সকাল বেশ ফুরফুরে মেজাজেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন উদয়ন গুহ। কিন্তু, বেলা বাড়তেই অন্য মুখ। যত বেলা বেড়েছে ততই মেজাজও বিগড়েছে তাঁর।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

দিনহাটা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:১৯
Share:

উদয়ন গুহ।

ভোট শুরু হওয়ার মুখে। সকাল সকাল বেশ ফুরফুরে মেজাজেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন উদয়ন গুহ। কিন্তু, বেলা বাড়তেই অন্য মুখ। যত বেলা বেড়েছে ততই মেজাজও বিগড়েছে তাঁর।

Advertisement

ফলশ্রুতিতে বুথের সামনে গিয়ে রাজ্য পুলিশের অফিসারকে ধমক দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আবার কখনও বুথের ভিতরে ঢুকে ছাপ্পা ভোটে মদত দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। উদয়নবাবুর কাণ্ড-কারবার দেখে বিরোধী জোট তো বটেই, তৃণমূলের একাংশের চোখও কপালে উঠে যায়। সব দেখেশুনে উদয়নবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআরের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সরকারি সূত্রের খবর, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা না করার জন্য উদয়নবাবুর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, বহু চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়া আটকাতে না পেরে ধৈর্য্য হারিয়ে ছাপ্পা ভোট দিয়েছেন উদয়নবাবু। ধমকেছেন পুলিশকে।

তৃণমূলের দিনহাটার প্রার্থী উদয়নবাবু অবশ্য ঘটনাগুলি পুরোপুরি ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “কাউকে ধমক দিইনি। ছাপ্পা ভোটে মদতও দিইনি। বানিয়ে বানিয়ে বলা হচ্ছে। এসব অভিযোগ ঠিক নয়।” ওই কেন্দ্রের বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী অক্ষয় ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ, মানুষ যাতে ভোট দিতে না পেরে সে চেষ্টা বেশ কয়েকদিন ধরেই করা হচ্ছিল। বহু বুথে তাঁদের এজেন্ট বসাতে দেওয়া হয়নি। হুমকি দিয়ে তাঁদের এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের দিন যত গড়িয়েছে তত স্পষ্ট হয়েছে তৃণমূল কিছু করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ দলে দলে বেরিয়ে ভোট দিচ্ছে। তাতেই মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে উদয়নবাবুর।”

Advertisement

দলীয় সূত্রের খবর, সকালে ভোট দিয়ে দিনহাটা শহরে দলীয় অফিসে গিয়ে বসেছিলেন উদয়নবাবু। সেখান থেকেই চারদিকে খোঁজ নিচ্ছিলেন। মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। সেখানে বসেই খবর পান শুকারুরকুঠিতে তৃণমূলের একটি ক্যাম্প অফিস ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দলীয় কর্মীদের মারধর করেছে। প্রতিবাদে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন ওই এলাকার তৃণমূল কর্মীরা।

আধ ঘণ্টার মধ্যে ওই এলাকায় পৌঁছে যান তিনি। তাঁকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই দলীয় কর্মীরা ভিড় করেন। একের পর এক অভিযোগ শুনে ক্ষোভ বেড়ে যায় তাঁর। অভিযোগ এর পরেই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দিকে এগিয়ে যান তিনি। সেখানে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের এক এএসআই পরেশ বর্মন। মেজাজ হারিয়ে পরেশবাবুকে তিনি বলেন, “কেন ক্যাম্প হয়েছে ভাঙা হয়েছে? কেন মারধর করা হল? আমি জানতে চাই।” চড়া সুরে উদয়নবাবুর ওই কথা শুনে পুলিশ অফিসার চুপ করে দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে অবশ্য খবর, বুথের দু’শো মিটারের মধ্যে ক্যাম্প অফিস করে জমায়েত করেছিল তৃণমূল। অভিযোগ পেয়েই ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। এর পর উদয়নবাবু যান বামনহাটে। সেখানে ১২৩ নম্বর বুথ পাথরসন-মাধাইকাল প্রাথমিক স্কুলে তিনি বুথে ঢুকে ছাপ্পায় মদত দেন বলে অভিযোগ। উদয়নবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এক অন্ধ মহিলাকে তাঁর নাতি ভোট দেওয়ার জন্য বুথে নিয়ে যান। সেই সময় আমি বুথের খোঁজখবর নিচ্ছিলাম। ছাপ্পার অভিযোগ বানানো।” বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগও ওঠে উদয়নবাবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। বুড়িরহাট ১ পঞ্চায়েতের দশটি বুথে বিরোধীদের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন