দেবী চৌধুরানির মন্দিরে আগুন, উদ্বিগ্ন নবান্ন

পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী শিকারপুরের দেবী চৌধুরানির মন্দির। শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আগুন লাগে।  গ্রামবাসীরা আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। দমকল যায়।  কিন্তু, তার আগেই গোটা মন্দির ছাই হয়ে যায়। কীভাবে আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
Share:

লেলিহান: জ্বলছে মন্দির। শুক্রবার রাতে।— নিজস্ব চিত্র।

পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী শিকারপুরের দেবী চৌধুরানির মন্দির। শুক্রবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আগুন লাগে। গ্রামবাসীরা আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। দমকল যায়। কিন্তু, তার আগেই গোটা মন্দির ছাই হয়ে যায়। কীভাবে আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার ওই মন্দির পুনর্নির্মাণে সব রকম সাহায্য করবে। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে রয়েছেন। এলাকাবাসীদের একাংশ আগুনের আড়ালে কেউ আছে কি না তা খুঁজে বার করার দাবি তুলেছেন। আজ, শনিবার সেখানে যাবেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না। কী ভাবে কী হয়েছে সব বার করা হবে।’’

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় মূল মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় বলে অনুমান করা হয়। কথিত আছে, সে সময় দেবী চৌধুরানি এবং ভবানী পাঠক ডাকাতি করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ সংগ্রহ করতেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে এই মন্দিরটির কথা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। রাজগঞ্জের শিকারপুরের ছোট নদী চেমটাখাড়ির পাশে একটি মন্দিরে পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে যেতেন তাঁরা। দু’জনের মৃত্যুর পরে রাজা দর্পদেব রায়কত মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরে কোনও দেব-দেবীর পুজো হয় না। দেবী চৌধুরানি, ভবানী পাঠক এবং তাঁদের দুই বরকন্দাজ রঙ্গরাজ, রঙ্গলাল এবং দেবী চৌধুরানির দুই সখী নিশা এবং দিবার মূর্তি রয়েছে। উত্তরবঙ্গের ইতিহাস গবেষক উমেশ শর্মা বলেন, ‘‘খবরটা শুনে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। মন্দিরটি সম্প্রীতিরও একটি নজির। হিন্দু এবং মুসলিম দুই সম্প্রদায়ই মন্দিরে যাতায়াত করতেন।’’

Advertisement

এ দিন দমকল অনেক দেরিতে পৌঁছায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এই অবস্থায় এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়৷ কেউ কেউ এমন অভিযোগও করেছেন, প্রতিদিন রাত হলেই মন্দির লাগোয়া এলাকায় কিছু অসামাজিক মানুষের আড্ডা বসে৷ আগুনের কারণ তারাও হতে পারে বলে অভিযোগ তাঁদের৷ দমকলের এক কর্তা জানান, আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়৷ মন্দিরটি জলপাইগুড়ি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় পৌঁছতে খানিকটা সময় লেগে যায়৷

সাত চালা মন্দিরটি নকশাতেও স্বতন্ত্র ছিল। প্যাগোডা ধাঁচে তৈরি হয়েছিল মন্দিরটি। সে সময় এমন স্থাপত্য বিরল বলে ইতিহাসবিদদের দাবি। আগুনের পর সে সব থাকল ইতিহাসের পাতাতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন