কালিম্পঙে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
নতুন জেলা ঘোষণার পরে ‘মাঠ’ প্রায় প্রস্তুত। সেখান থেকেই পাহাড়ে ভোটের দৌড় শুরু করল তৃণমূল।
মঙ্গলবার কালিম্পঙের মেলার মাঠে সরকারি সভা থেকে নতুন জেলার কাজ শুরুর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সেই মাঠেই তৃণমূলের সভায় অন্য দল থেকে প্রায় ৫ হাজার কর্মী-সমর্থক তৃণমূলে যোগ দিলেন। এমনিতেই পর পর ১৫টি বোর্ড গঠনের সুবাদে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা নানা সম্প্রদায়ের হাতে পৌঁছনোর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে পাহাড়ে প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ চড়ছে। তার উপরে নানা কাজে দার্জিলিং জেলা সদরে ছোটাছুটি করে আর সময় ও টাকা যাবে না বুঝতে পেরে কালিম্পংবাসীর প্রত্যাশা আকাশ ছুঁয়েছে। তার জেরেই পাহাড়ে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিতে এ দিন হুড়োহুড়ি পড়ে যায় বলে পাহাড়বাসীরাও মনে করছেন। অরূপবাবু নাম না করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘‘কেউ শুধু গরম বিবৃতি দিয়ে বাজার গরম করতে চান। তাতে কিছু হবে না। উন্নয়ন নিয়ে লড়াই হোক। তখন পাহাড়ও বুঝিয়ে দেবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বাংলায় কেউ উন্নয়নের লড়াইয়ে জিতবেন না।’’ চলতি বছরেই পাহাড়ে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা।
আরও পড়ুন:
বিল এত টাকার! তদন্ত চান মুখ্যমন্ত্রী
মোর্চা শিবিরের ছবিটা সেখানে এ দিন অনেকটা মেয়ের বিয়ে হওয়ার পরের দিনের মতো। দার্জিলিঙের মোর্চা নেতাদের একাংশের দাবি, তাঁদের কাছে কালিম্পং ছিল আদুরে মেয়ের মতোই। কিন্তু তাকে আলাদা জেলা করে দেওয়ায়, এ বার সেখানে তাঁদের প্রভাব কতটা থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মোর্চার অন্দরেই। এমনকী, জেলা ঘোষণার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে জিটিএ-র তরফে মোর্চার সভাসদরা উপস্থিত থাকলে আখেরে ফায়দা হতো বলেই দলের অনেকে মনে করছেন। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির মন্তব্য, ‘‘জিটিএকে উপেক্ষা করে বোর্ড গড়লেই পাহাড়বাসীর মন জয় হবে না। ভোট হলেও সব বোঝা যাবে।’’
তবে ‘উন্নয়ন বোর্ড’ যে রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার, তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা ঘোষণার পরে প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে সব ক’টি বোর্ডের চেয়ারম্যানদেরও ডেকেছিলেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতায় পাহাড়ের ১৫টি বোর্ডের দেওয়া তালিকা মেনে ১৫০টি ক্লাবকে গড়ে ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনিযুক্তি প্রকল্পে যুক্ত করতেও বোর্ডকে সামনে রাখবে রাজ্য। প্রতিটি বোর্ডের তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য বিপণন কেন্দ্র গড়তে জমি দেবে রাজ্য। এমনকী, তরাই-ডুয়ার্সে আদিবাসী ও গোর্খাদের জন্য যে টাস্ক ফোর্স রয়েছে, তা ভেঙে দু’টি বোর্ড গড়ার কথাও ভাবছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা পাহাড়ের উন্নয়নে আরও গতি আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সব সম্প্রদায় তাতে সামিল হয়েছে। কেউ গোলমাল কিংবা অশান্তি পাকাতে চাইলে মানুষ সমবেত ভাবে জবাব দেবেন।’’