দুপুর অবধিও নামেনি জল। —নিজস্ব চিত্র।
রাতের বৃষ্টির জল জমে থাকল দুপুর পর্যন্ত। কয়েক পশলা বৃষ্টিতেই উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম ব্যস্ত স্টেশন নিউ জলপাইগুড়ির (এনজেপি) ঢোকা-বের হওয়ার পথ জলমগ্ন হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। জলে ডুবে যায় স্টেশনে ঢোকার কয়েকটি সিঁড়িও। তবে রাতের বৃষ্টির জল সকাল গড়িয়ে দুপুর পর্যন্ত জমে থাকায় রবিবার দিনভর নাকাল হতে হয়েছে যাত্রীদের।
চলতি বর্ষার মরসুমের শুরুতেই একদিন স্টেশন চত্বরে জল জমে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছিল। রবিবারও তার পুনরাবৃত্তি হল। ঘটনা হল, শনিবার রাত থেকে শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় তুমুল বৃষ্টি হয়। গভীর রাতে বৃষ্টি থেমেও যায়। শিলিগুড়ি শহরের বেশ কিছু এলাকাও রবিবার সকালে জলমগ্ন হয়ে থাকলেও, বেলা গড়াতেই জল নেমে যায়। তবে এ দিন দুপুর দু’টোর সময়ে এনজেপি স্টেশন থেকে বের হওয়ার পথে জল জমে ছিল। যাত্রীদের অভিযোগ পেয়ে দুপুরের পরে সেই জল বের করতে রেলের তরফে কর্মীদের কাজে নামানো হয়। রাস্তার পাশের নিকাশি নর্দমা সাফ করে জল বের করার কাজ শুরু হয়।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার বিভাগের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানি। নিকাশি নালাগুলির উপরে বেশ কিছু অনুমোদনহীন নির্মাণ হয়েছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’
সাধারণ যাত্রীদের ভিড় তো বটেই বছরভরই নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পর্যটকদেরও ভিড় লেগে থাকে। সে কারণেই এই স্টেশনের যাত্রী স্বাচ্ছন্দে বাড়িতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটন ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। যদিও, রেল কর্তৃপক্ষের আদৌও সে দিকে নজর রয়েছে কিনা সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বৃষ্টির জমা জল। স্টেশনে যানবাহান ঢোকা এবং বের হওয়ার কয়েকটি পথ রয়েছে। স্টেশনের কম্পিউটারাইজড আসন সংরক্ষণ কাউন্টারের সামনে দিয়ে যে রাস্তাটি গিয়েছে সেটি এ দিন দুপুর পর্যন্ত জলে ডুবে ছিল। বাস থেকে নেমে ওই রাস্তায় জল পার হয়ে যাত্রীদের স্টেশনে যেতে হয়েছে। পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়ির চাকায় লেগে ছলকে যাওয়া জলে ভিজতেও হয়েছে যাচ্রীদের কয়েকজনকে। আসন সংরক্ষণ কেন্দ্রে যেতে নাকাল হতে হয়েছে বাসিন্দাদেরও। বাইক চালিয়ে গেলেও চালকের পোশাকে জল ছিটেছে। যাত্রীদের কয়েকজন প্ল্যাটফর্মে থাকা রেল কর্মীদের অভিযোগও জানিয়েছেন।
দিল্লিগামী রাজধানী এক্সপ্রেস ধরতে স্টেশনে এসেছিলেন মালদহের আম ব্যবসায়ী রমন চৌবে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘জল পার হয়ে স্টেশনে যেতে হবে এটা ভাবতেই পারিনি। এনজেপির মতো এত গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের এমন হাল মেনে নেওয়া যায় না। এতে ভিন রাজ্যের যাত্রী বা পর্যটকদের কাছে উত্তরবঙ্গের সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হচ্ছে।’’ এনজেপির যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দীপক মোহান্তির অভিযোগ, ‘‘একাধিকবার স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে জল জমার সমস্যা নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবারই দেখছি, দেখব আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। তাই যাত্রীদের দুর্ভোগ চলছেই।’’
স্টেশন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জল বের হয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক নিকাশি নালা এবং হাইড্রেন রয়েছে। যদিও, স্টেশন চত্বরে অনুমতি ছাড়াই নর্দমার উপরে একাধিক নির্মাণ হয়েছে, দোকান গজিয়ে উঠেছে। সে কারণেই নিকাশি ব্যবস্থা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সাহায্যে স্টেশন লাগোয়া এলাকার অনুমতিহীন নির্মাণ সরানো হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। তবে কবে সেই পদক্ষেপ হবে সেটাই অপেক্ষার।