অপ্রিয় প্রশ্ন তুলে দিল বনকর্মীর মৃত্যু

ছ’জন বনকর্মী একযোগে কাঠচোরদের তাড়া করতে ছুটলেন। চোরেদের দিক থেকে একটা গুলির আওয়াজ পেয়ে বনকর্মীরা গুলি চালালেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৪
Share:

ছ’জন বনকর্মী একযোগে কাঠচোরদের তাড়া করতে ছুটলেন। চোরেদের দিক থেকে একটা গুলির আওয়াজ পেয়ে বনকর্মীরা গুলি চালালেন। সেই গুলি বিঁধল বনকর্মীদের দলে থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব কার্তিক গুহ রায়ের পায়ে। চার-পাঁচটি ছররা গুলি নিয়ে পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসার পর মৃত্যু হল তাঁর। তার পরেই ওই ঘটনা কেন ঘটল, তার দায় কাদের উপরে বর্তাবে তা নিয়েই এখন ডুয়ার্সের বনকর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে।

Advertisement

ক্ষুব্ধ বনকর্মীদের বক্তব্য, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই, সার্চ লাইট নেই, এমনকী প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীও কম। তাই তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘এ সব জেনেও এমন ঝুঁকিপূর্ণ ‘অপারেশন’ চালানোর সময়ে গুলি করার আগে কেন অতি মাত্রায় সতর্ক হননি বাকি অফিসার-কর্মীরা?’’ ফলে, অভিযানের দায়িত্বে থাকা অফিসারের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা নিয়ে বনকর্মীদের একাংশের মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।

তবে বন দফতর এখনও পর্যন্ত ‘দুর্ঘটনা’ বলেই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের যে রিপোর্ট হাতে এসেছে, তাতে দুর্ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। তাই কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷” জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার পর বন দফতরের তরফে শামুকতলা থানায় যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতেও দুর্ঘটনা বলা হয়েছে৷ তা ছাড়া যেহেতু কার্তিকবাবুর মৃত্যু শিলিগুড়িতে হয়েছে, ফলে সেখানকার থানায় এ ব্যাপারে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হবে। তবে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “এই মৃত্যু নিয়ে কেউ যদি পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করে, তা হলে সেই মতো মামলা হবে।’’
প্রাথমিক তদন্তে বনকর্তারা জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে রায়ডাক বিটের মোট ছ’জন বনকর্মী জঙ্গলের ভিতরে টহলে বের হন৷ অন্ধকারের মধ্যে ঘন জঙ্গলে তারা সন্দেহ করেন, কাঠ পাচারকারীরা গাছ কাটছে। ওই টহলদারি দলে থাকা এক কর্মীর কথায়, “পাচারকারীরা যাতে আমাদের উপস্থিতি টের না পায় সে জন্য টর্চ জ্বালানো হয়নি৷ নিঃশব্দে ওদের তাড়া করতে শুরু করি। সেই সময় অন্ধকারে কোনওভাবে কার্তিক দলছুট হয়ে যায়। পাচারকারীদের ধরতে তাদের কাছাকাছি পৌঁছে যান বলে মনে হয়। তখন একটা গুলির শব্দ পেয়ে, আমাদের দিক থেকেও ছররা গুলি ছোড়া হয়৷ অন্ধকারে সেই ছররাগুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কার্তিকবাবুর পায়ে লাগে৷” কিন্তু পাশাপাশি ছ’ জনের মধ্যে একজন এগিয়ে গিয়েছেন সেটা বুঝেই, বাকিদের গুলি চালানো উচিত ছিল কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে বনকর্মীদের মধ্যেই।

Advertisement

এমন নানা প্রশ্ন ওঠায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি শ্রী হরিশ বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিভাগীয় তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে৷”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন