কয়েক দফা বৃষ্টির পরেই কুলিকে আসতে শুরু করেছে পাখিরা। ছবি: গৌর আচার্য।
আশঙ্কা কাটিয়ে অবশেষে পক্ষিনিবাসে পরিযায়ীদের ডানার ঝাপটা লাগতে শুরু করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল বন দফতর। খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে পর্যটকদের মধ্যেও।
রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) দীপর্ণ দত্ত জানান, গত প্রায় দু’মাস ধরে টানা রোদের তাপ ও পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে কুলিক নদী ও নদী সংযোগকারী খালের জল প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল। তাই খাবারের সঙ্কটে এ বছর সঠিক সময়ে পরিযায়ীরা আসবে না বলে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সাময়িক প্রতিকূল পরিবেশের জেরে এ বছর পরিযায়ীরা পক্ষিনিবাসবিমুখ হতে পারে বলেও অনেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়। ডিএফও বলেন, ‘‘গত এক সপ্তাহে দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে কুলিক নদী ও সংলগ্ন নদীখাল জলে ভরে গিয়েছে। তাই সব আশঙ্কা ও সংশয় কাটিয়ে পরিযায়ীরা পক্ষিনিবাসে আসতে শুরু করায় আমরা খুশি।’’ তিনি জানান, বুধবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে পরিযায়ীরা পক্ষিনিবাসে আসতে শুরু করেছে।
বন দফতর সূত্রের খবর, প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সহ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরণ, করমোন্যান্ট, ইগ্রেট সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুলিকে আসে। কয়েক হাজার গাছে বাসা বেঁধে প্রজনন করার পর ছানারা ওড়া শিখলে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ পরিযায়ীরা ফিরে যায়।
বন দফতর সূত্রের খবর, পরিযায়ীরা মূলত কুলিক নদী ও পক্ষিনিবাসের নদীখাল থেকে মাছ, শ্যাওলা, শামুক, কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ পোকা খেয়ে বেঁচে থাকে। গত বছর কুলিকে এশিয়ার বিভিন্ন পক্ষিনিবাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী এসেছিল। ওই বছর লিমকা কর্তৃপক্ষের বিচারে এশিয়া মহাদেশে পরিযায়ীদের বাসস্থান হিসেবে কুলিক প্রথম স্থানও দখল করে। ওই বছর কুলিকে পাখি এসেছিল ৪৭ হাজার ১৮০টি। তার আগে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পক্ষিনিবাসে পরিযায়ী এসেছিল যথাক্রমে ৩৯ হাজার ৮৩৬, ৪৪ হাজার ২৯৮ ও ৪৬ হাজার ৮৪২টি।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও মার্চ মাস থেকে চলতি মাসের গত সপ্তাহ পর্যন্ত টানা রোদের তাপ ছিল ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়নি। বন দফতরের দাবি, এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টিপাত না হলে এ বছর পরিযায়ীরা সঠিক সময়ে পক্ষিনিবাসে আসবে না বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। তার উপর ১৫ থেকে ১৮ মে একঝাঁক পরিযায়ী পক্ষিনিবাসে এসেও আকাশে কয়েক চক্কর কেটে ফিরে যাওয়ায় বন কর্তাদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়।
পিপল ফর অ্যানিম্যালের উত্তর দিনাজপুর ও রায়গঞ্জ শাখার দুই সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া ও অজয় সাহার দাবি, জল শুকিয়ে যাওয়ায় খাবারের সঙ্কট আঁচ করতে পেরেই কিছু দিন আগে পরিযায়ীরা পক্ষিনিবাসে এসেও ফিরে চলে যায়। তাঁদের কথায়, ‘‘এর মধ্যে বৃষ্টি পড়ার জেরে পরিযায়ীদের খাবারের সঙ্কট দূর হয়েছে। তাই তারা আসতে শুরু করায় আমরাও খুশি।’’