ছুটির ফাঁদে ধান বিক্রি, ধলতা চলছেই

রিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন ঠিকই, কিন্তু সরকারি কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন এখনও ধলতা নিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বুনিয়াদপুর, রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৫
Share:

ফাঁকা: দরজা খোলা, কিন্তু আদতে বন্ধ কৃষক বাজার। বালুরঘাটে শনিবার। নিজস্ব চিত্র

পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন ঠিকই, কিন্তু সরকারি কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন এখনও ধলতা নিচ্ছে। উল্টো দিকে, উত্তর দিনাজপুর জেলার চাষিরা অভিযোগ তুলেছেন, বছরের প্রথম ১৫ দিন ধরে ধান্য ব্যবসায়ীদের মাঠের বাইরে রেখে ধান কেনার আয়োজন করেও শেষে কার্যত আট দিনের বেশি ধান কিনতে পারল না সরকার। ছুটিছাটা আর বন্‌ধে চলে গেল বাকি সময়।

Advertisement

শুক্রবার মালদহের বামনগোলায় ধলতা নিয়ে মুখ খোলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন, ধানের সঙ্গে ধলতা নেওয়া যাবে না। সাধারণত, পচা বা নষ্ট ধান বাবদ ৩ থেকে ৭ কেজি ধান বাদ ধলতার অংশ বাদ দেয় সরকারি ক্রয় কেন্দ্র। কিন্তু ফ়ড়েরা তা করে না। এই নিয়ে শুধু দুই দিনাজপুর নয়, সব জেলার চাষিই অভিযোগ করে আসছেন। শুক্রবার শুভেন্দুর ঘোষণা শুনে অনেকেই আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এখনও তা ঘটছে না। কারণ, সরকারি দফতরের সাফ কথা, কোনও নির্দেশিকা তাঁরা পাননি।

দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা খাদ্য নিয়ামক অমরেন্দ্র রায় অবশ্য এই অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘‘ধলতা নেওয়া হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘সরকারি ছুটিতে কিসানমান্ডিতে ধান কেনা না হলেও সমবায়ের ক্যাম্পগুলি চলেছে। ফলে জেলার কোথাও ধান কেনা বন্ধ নেই।’’

Advertisement

সূত্রের খবর, প্রতি কৃষক ৯০ কুইন্ট্যাল করে ধান বিক্রি করতে পারবেন। এদিকে, জেলার মিল মালিকরা কৃষকদের থেকে প্রতি কুইন্ট্যালে ৫ কেজি করে ধলতা ধান নিচ্ছে। ফলে একজন কৃষক ২০ কুইন্টাল ধানও যদি বিক্রি করেন তাঁকে এক কুইন্টাল ধান বিনামূল্যে ধলতা হিসেবে দিতে হচ্ছে মিল মালিকদের। ফলে, এই খাতেই কৃষকের ১৭৫০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তার উপর গ্রাম-গঞ্জের ১০ থেকে ১৫ কিমি রাস্তা ভেঙে গাড়ি ভাড়া করে ধান বিক্রি করতে এসে খরচও অনেক হচ্ছে। সব মিলিয়ে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণও অনেক হচ্ছে বলে দাবি। এর পাশাপাশি, গত ধর্মঘটের দুই দিনই কার্যত ধান কেনা বন্ধ ছিল। অনেক সরকারি ছুটির দিনেও কিসানমান্ডি বন্ধ থাকায় ধান কেনায় ছেদ পড়েছে। এই সুযোগে ফড়েদের কাছেই অনেকে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ।

যদিও দুই দিনাজপুরের প্রশাসনিক কর্তারা এই অভিযোগগুলি মানতে চাননি। দক্ষিণের মতো উত্তর দিনাজপুরের জেলা খাদ্য ও সরবরাহ আধিকারিক অমিত গঙ্গোপাধ্যায়েরও দাবি, ‘‘ধান কেনার প্রক্রিয়ায় চাষিদের হয়রানি করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকারি ছুটির জেরে চাষিদের ধান বিক্রি করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, সরকারের তরফে ধান কেনা বন্ধ করার কোনও দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। চাষিরা আপাতত যত দিন ধান দিতে পারবেন, তত দিন সহায়ক দরে ধান কেনার কাজ চালু থাকবে।’’

চাষির কাছ থেকে অতিরিক্ত ধান নেওয়া না হয় সেই দিকেও নজর রাখা হচ্ছে বলে ওই আধিকারিকের দাবি।

শনিবার কিসানমান্ডি বন্ধ ছিল। কিন্তু সে কথা উত্তর দিনাজপুরের বহু চাষি জানতেন না বলে দাবি করেছেন। এ দিন একাধিক ভুটভুটিতে ধান চাপিয়ে তা বিক্রি করার জন্য কিসানমান্ডিতে গিয়ে ফিরে আসেন রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছটপড়ুয়া এলাকার চাষি জগন্নাথ বর্মণ, মনিরাম বর্মণ ও বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি ভবতোষ সরকারদের। তাঁদের দাবি, ‘‘এর আগে কিসানমান্ডি থেকে চাষিদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিলি ও ধান কেনার তারিখ দীর্ঘদিন পরে দেওয়ার কারণে টাকার দরকারে বহু চাষি কম দামে ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ বারে পরপর ছুটির জেরে কিসানমান্ডি বন্ধ থাকায় আমরাও ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন