শহরে ডেঙ্গিতে প্রথম বলি, বিরোধী-নিশানায় পুরসভা
Dengue Death

শহরে ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে মৃত প্রাক্তন ক্রিকেটার

বাপ্পার শ্বশুরবাড়ি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যাসাগরপল্লিতে। সেখানে একটি মুদির দোকান চালাতেন বাপ্পা। দীর্ঘ ক্ষণ সেখানে থাকতেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২২
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের পরিজনেরা।  ছবি: স্বরূপ সরকার।

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এ বার মৃত্যু শিলিগুড়ি শহরে। বুধবার ভোরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে মারা গেলেন এক প্রাক্তন ক্রিকেটার। পরিবার এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম বাপ্পা রায় (৩০)। বাড়ি শিলিগুড়ির ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাজীব গান্ধী স্ট্রিট বাই লেনে। মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোমে’-এ আক্রান্ত হয়ে ওই যুবক মারা গিয়েছেন। শহরে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হওয়ায় ‘অস্বস্তিতে’ শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে শহরে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও, কারও মৃত্যু না হওয়া তাঁদের সাফল্য—এমনই প্রথম থেকে বলে আসছিলেন তাঁরা। এ দিন ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনার পরে, বিরোধীরা তাই সুর চড়িয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে। পুর কমিশনারের দফতরের সামনে এ দিন অবস্থান-বিক্ষোভও করে সিপিএম। মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

পরিবারের দাবি, গত রবিবার থেকে বেশ অসুস্থ বোধ করছিলেন বাপ্পা। তার কয়েক দিন আগে থেকেই তাঁর জ্বর হচ্ছিল। প্রথমে ওষুধের দোকান থেকে জ্বরের ওষুধ কিনে খেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার খালপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাপ্পাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করান। রাতে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় তাঁকে। এ দিন ভোরে মারা যান বাপ্পা।

বাপ্পার শ্বশুরবাড়ি পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যাসাগরপল্লিতে। সেখানে একটি মুদির দোকান চালাতেন বাপ্পা। দীর্ঘ ক্ষণ সেখানে থাকতেন তিনি। সময় পেলে স্থানীয় একটি ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএবি'র অম্বর রায় সাব-জুনিয়র ক্রিকেট লিগে খেলেছেন। মৃতের মা সন্ধ্যা রায় এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার যখন বমি হয়, তার কয়েকদিন আগে থেকেই ওর জ্বর ছিল। সকালে শ্বশুরবাড়ির এলাকায় দোকানে চলে যেত। এ বাড়ির সঙ্গে কথাবার্তা কম বলত। কিন্তু ঠিক মতো চিকিৎসা হল কি না, সেটাই বুঝতে পারছি না। নার্সিংহোম থেকে
কেনই বা মেডিক্যালে নেওয়া হল, জানি না।’’

Advertisement

এ দিকে, বাপ্পার মৃত্যুর কারণ হিসাবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোম’-এর কথা জানানো হলেও, জেলা স্বাস্থ্য দফতর এখনই তা মানতে রাজি নয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গিতেই মৃত্যু কি না তা এখনই বলতে পারব না। কেন না, বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করানো হয়েছিল। অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস, হেপাটাইটিস ছিল। পেটে জল জমেছিল। সে সব নথিপত্র সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটিতে পাঠানো হবে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ দুলাল দত্ত বলেন, ‘‘সময় মতো চিকিৎসা করালে হয়তো মৃত্যু এড়ানো যেত। রোগ প্রতিরোধে পুরসভার তরফে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত পরীক্ষার রিপোর্ট পুরসভার তরফেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করা হচ্ছে।’’ এ দিন মৃতের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির অমিত জৈন। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে গোড়া থেকেই ব্যবস্থা নিতে আমরা পুরসভাকে বলছি। তারা যথাযথ পদক্ষেপ করলে, এ ভাবে এক জনকে হারাতেন না পরিবারের লোকেরা।’’

শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচশোর মতো। সে কারণেই উদ্বেগ বেড়েছে। এ দিন পুর কমিশনারের ঘরের সামনে সিপিএমের ৩ নম্বর এরিয়া কমিটির বিক্ষোভে ছিলেন দলের পুরপ্রতিনিধিরাও। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘কত জনের ডেঙ্গি হচ্ছে, মানুষ জানতে পারছে না। এটাও ধামাচাপার দেওয়ার চেষ্টা হবে। পুরসভা অন্য ব্যাপারে যতটা সক্রিয়, ডেঙ্গির ব্যাপারে ততটা নয়। উদাসীন। আমরা পুর কমিশনারকে বলেছি, মৃত্যু-সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন