মনের জোরেই পরীক্ষা দিচ্ছেন ৪ দৃষ্টিহীন ছাত্র

মঙ্গলবার শহর লাগোয়া গুড়িয়াহাটির কোচবিহার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

অরিন্দম সাহা 

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:২০
Share:

পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে। মঙ্গলবার। নিজস্ব িচত্র

অদম্য ইচ্ছেশক্তি আর মনের জোর থাকলে কোনও প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারেনা। শারীরিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার জোড়া সমস্যা সত্ত্বেও একসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে সেটাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের চার দৃষ্টিহীন ছাত্র।

Advertisement

মঙ্গলবার শহর লাগোয়া গুড়িয়াহাটির কোচবিহার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁরা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চার ছাত্রের নাম রবিচান বর্মণ, ভজন দে, স্বপন রায় ও শাহজাহান মন্ডল। মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ওই চারজনেই ভাল ফল করে নজর কাড়েন। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকেও তাই তাঁদের ভাল ফলের ব্যাপারে আশাবাদী স্কুলের শিক্ষকেরা। কোচবিহার টাউন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিভূতি দে তরফদার বলেন, “চারজনেই মেধাবী। কারও পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তার মধ্যেও সকলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও ওদের ভাল ফলে আশাকরছি।”

স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, রবিচানের বাড়ি তুফানগঞ্জ মহকুমার বক্সিরহাটে। ভজন কোচবিহার ১ ব্লকের ঘুঘুমারি এলাকার বাসিন্দা। স্বপন রায় দিনহাটার জামাদরবসের বাসিন্দা। শাহজাহানের বাড়ি তুফানগঞ্জের ছাতোয়া এলাকায়। সংসদের নিয়ম েমনে লেখক নিয়ে এ দিন পরীক্ষা দেন তারা। রবিচান বলেন, “বাবা আনন্দ বর্মণ মাছ বিক্রেতা। পরিবারে অনটন রয়েছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করার ইচ্ছে রয়েছে আমার।” মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছেন তিনি। এ বারেও ভাল ফলের ধারাবাহিকতা রাখতে চান।

Advertisement

ছাতোয়ার শাহজাহানও মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “বাবা হোসেন মন্ডল দিনমজুরি করেন। ছয় ভাই, মাকে নিয়ে টানাটানির সংসার। শিক্ষক হতে চাই।” ভজন মাধ্যমিকে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “বাবা দীপেন দে বেতের কাজ করেন। নিজে চাকরি করার স্বপ্ন দেখি।” জামাদরবসের স্বপনেরও ওই একই রকম লক্ষ্য। মাধ্যমিকে ৬৩ শতাংশ নম্বর পাওয়া স্বপন বলেন, “বাবা সুবল রায় কৃষক। বাড়িতে তিন ভাই, তিন বোন রয়েছে। আর্থিক সমস্যা থাকলেও ভবিষ্যতেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই।”

ওই চারজনের লেখক হয়েছিল জেনকিন্স স্কুলের চার পড়ুয়া। তারা হল আকাশ সরকার, প্রীতম দেবনাথ, পীষূষ দাস ও শুভম দে। তাদের কথায়, ‘‘আমাদেরও কাছেও এটা অন্য অনুভূতির।’’ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কোচবিহারের প্রতিনিধি, ডিসট্রিক্ট অ্যাডভাইসরি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মানস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওই চারজন ছাড়াও কোচবিহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সোয়েতা সাহা ও দিনহাটার একটি স্কুলে মনিরুদ্দিন মিঁয়া নামে আরও দু’জন শারীরিক প্রতিবন্ধী পরীক্ষা দিয়েছেন। প্রত্যেককেই নিয়ম মেনে বাড়তি সময় দেওয়া হয়। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংদের ডিসস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইসরি কমিটির সদস্য মিঠুন বৈশ্য বলেন, “ওই পরীক্ষার্থীদের কারও যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয় সেদিকে বাড়তি নজর রাখা হয়েছিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন