মাছ থেকে ওয়াই-ফাই, নানা আয়োজন পুজোয়

ঝিলের ধারে বসে নদীয়ালি মাছ চাখার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে বিশাল জলাশয়ের ধারে ঝাঁ চকচকে কটেজে নিশ্চিন্তে অবসরযাপনের সুযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার ও মালবাজার শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪০
Share:

টিলাবাড়ির এই কটেজই সেজে উঠেছে নতুন রূপে। —নিজস্ব চিত্র

ঝিলের ধারে বসে নদীয়ালি মাছ চাখার সুযোগ রয়েছে।

Advertisement

রয়েছে বিশাল জলাশয়ের ধারে ঝাঁ চকচকে কটেজে নিশ্চিন্তে অবসরযাপনের সুযোগ।

কোথাও বা চা বাগান ঘেরা পথে তোলা নিজস্বী মুহূর্তে আপলোড করে দেওয়ার জন্য ওয়াই-ফাই চান? রয়েছে তা-ও! পুজোয় পর্যটকদের জন্য এমন নানা সম্ভার নিয়েই সাজছে উত্তরের নানা এলাকা।

Advertisement

একদিকে সুবিশাল জলাশয়ের কাছে নতুন চেহারায় সাজিয়ে তোলা কটেজ। অন্যদিকে নদীয়ালি মাছের নানা রেসিপি থেকে সুস্বাদু নানা ভোজের স্পেশাল মেনু। এমন জোড়া আকর্ষণেই এবার পুজোর মরসুমে কোচবিহারের রসিকবিলে পর্যটক আকর্ষণ বাড়ানর পরিকল্পনা হয়েছে। সৌজন্যে বন উন্নয়ন নিগম ও তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতি। নিগমের উদ্যোগে তাদের আওতাধীন কটেজগুলি সংস্কারের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে লাগোয়া চত্বরে থাকা ওই পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলোর টান ধরে রাখতে পুজো স্পেশাল মেনুর বন্দোবস্ত করছেন।

রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ বলেন, “রসিকবিল-সহ নিগমের আওতাধীন যেসব বাংলোর সংস্কার দরকার ছিল, সেসবই নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।” তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন সাহা জানিয়েছেন, বাংলোর পরিকাঠামো ঠিকই রয়েছে। তবে পুজোর মরসুমে সেখানে যাতে পর্যটকদের থাকবার আকর্ষণ ধরে রাখতে তাই অন্তত চারদিন স্পেশাল মেনুর ব্যবস্থা হচ্ছে।

নিগম ও সমিতি সূত্রেই জানান গিয়েছে, পর্যটকদের রাত্রিবাসের জন্য বন নিগমের দুটি দু’শয্যার কটেজ, আট শয্যার দুটি ডরমেটরি রয়েছে। এ বার পুজোর মুখে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে ওই কটেজ, ডরমিটরি সংস্কার করে সাজানো হয়েছে। ঝাঁ চকচকে করে গড়ে তোলা হয়েছে শৌচাগারও। নিগমের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ম্যানেজার অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ নতুন চেহারায় সাজানো কটেজে বুকিং দেওয়া শুরু হয়েছে।”

তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির দুটি বাংলোয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর, ডরমেটরি-সহ ১৫টি শয্যা রয়েছে। সেখানে থাকা পর্যটকেরা অর্ডার করলে খাবার পান। সারা বছর মূলত মুরগির মাংস, রুই, কাতলা মাছের ঝোল, ডাল, সব্জি মেনু হিসেবে রাখা হয়। এ বার পুজোর চারদিন দেশি মুরগি, পাঁঠা, বোরোলির সঙ্গে স্থানীয় জলাশয়ের ট্যাংরা, শোল, কই প্রভৃতি মাছের ‘অপশন’ বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকবে। অর্ডার করলে দই, মিষ্টি, পকোড়াও মিলতে পারে। নিগমের এক কর্তাও জানিয়েছেন, পুজোর সময় তাদের কটেজে বুকিং নেওয়া পর্যটকদের জন্যও বাড়তি মেনুর সুযোগ থাকবে।

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাম জমানায় কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার প্রত্যন্ত রসিকবিল এলাকার বিশাল জলাশয়কে কেন্দ্র করে ওই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। শীতের মরসুমে রসিকবিলের জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের টানেই সেসময় মূলত পর্যটকদের ভিড় হত। পরে অবশ্য রসিকবিলে চিতাবাঘ উদ্ধার কেন্দ্র, ঘড়িয়াল পার্ক, হরিণ উদ্যান, ময়ুর উদ্ধার কেন্দ্র, পাখিরালয় করা হয়। মিনি জু হিসেবেও ওই কেন্দ্রটি চিহ্নিত হয়েছে। ফলে সারাবছর সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে।

কিন্তু ডুয়ার্স, পাহাড়ের মত সেখানকার কটেজ, বাংলোয় রাত্রিবাসের চাহিদা নেই। পরিকাঠামো, রকমারি খাবারের সুযোগ না থাকা নিয়েও অনেকে তাই আক্ষেপ করতেন। খামতি মিটিয়ে পুজোর মরসুমে বাড়তি ভিড়ের কথা মাথায় রেখে এবার পর্যটকদের রসিকবিলে রাত্রিবাসের আকর্ষণ বাড়াতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

কেবল কোচবিহার নয়, পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি ডুয়ার্সও। মহালয়ার সকাল থেকেই ডুয়ার্সের মালবাজার মহকুমার দুই প্রান্তে দু’টি নতুন স্বাদের জিনিস পেতে চলেছেন পর্যটকেরা। প্রথমটি গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া টিলাবাড়িতে। এখানে ১০টি কটেজ বিশিষ্ট রিসর্ট খুলছে মহালয়াতে। রাজ্য পর্যটন দফতরের এই কটেজের সবকটিই বাতানুকূল। গরুমারা জাতীয় উদ্যানের মূল প্রবেশ গেটের কাছেই এই টিলাবাড়ির কটেজে রেঁস্তোরাও থাকছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইট থেকে এর বুকিংও চালু করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। পর্যটন দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা সুনীল অগ্রবাল জানান, মহালয়ার দিন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব নিজেই টিলাবাড়ির কটেজের উদ্বোধনে আসছেন। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই কটেজগুলোর সঙ্গে আগামী কিছু মাসের মধ্যেই একটি বন্যপ্রাণ বীক্ষণ কেন্দ্রও তৈরি হয়ে যাবে বলেও সুনীলবাবু জানান।

আমদাবাদের একটি বন্যপ্রাণ বিষয়ক জাতীয় স্তরের সংস্থা এই কেন্দ্র তৈরির কাজটি করছে। একই সঙ্গে এখানে পুজোর পরপরই একটি পানশালাও তৈরি হয়ে যাবে। উদ্বোধন থেকেই পর্যটকদের ঢল নামবে ধরে নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতির যাবতীয় কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে জানালেন কটেজের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার নিরঞ্জন সাহাও।

এ দিকে প্রথম উপহারের মতই দ্বিতীয় উপহারটিও নজরকাড়া। মালবাজার পুরসভার উদ্যোগে মহালয়া থেকেই শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ওয়াই-ফাই জোন তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। মহালয়ার থেকেই বাসিন্দা তথা পর্যটকেরা এর সুবিধা নিতে পারবেন। পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহা বলেন মালবাজার শহরে প্রচুর দেশ বিদেশের পর্যটকেরা আসেন। তাদের একটু বাড়তি সুবিধা দিতেই আমাদের এই উদ্যোগ। শহরের সুভাষ মোড়, ঘড়ি মোড়, ক্যালটেক্স মোড় এবং কলোনি ময়দান এই চারটি কেন্দ্রের থেকে একশো মিটারের বৃত্তের পরিধি পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা চলবে বলে স্বপনবাবুর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন