আশা ছিল। তবে তা পূরণ হয়নি। এমনকী, মেলেনি পূরণ হওয়ার কোনও দিশাও। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সফরের শেষে সেই উদ্বেগেই রয়েছেন উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকেরা।
চা বাগান অধ্যুষিত বীরপাড়ার ডিমডিমায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করবেন শুনে আশায় ছিলেন বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকরা। ডুয়ার্সে বর্তমানে ছ’টি বাগান বন্ধ। রেড ব্যাঙ্ক, সুরেন্দ্রনগর, ধরণীপুর, বান্দাপানি, ঢেকলাপাড়া এবং মধু। এর মধ্যে ঢেকলাপাড়া চা বাগান মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে। যদিও, বুধবারের সভায় বন্ধ বাগান খোলা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ বা আশ্বাসের কথা শোনা যায়নি। তাই হতাশা বেড়েছে বন্ধ বাগানে।
চা বাগান রাজ্য এবং কেন্দ্রের যৌথ তালিকায় রয়েছে। সে কারণে বন্ধ বাগান খুলতে কেন্দ্রেরও সাহায্য প্রয়োজন। যদিও, সংঘাত এড়িয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার পথে যাওয়ার কোনও বার্তাও বীরপাড়ার সভায় মুখ্যমন্ত্রী দেননি বলে আক্ষেপ করেছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ। এ দিকে, চা শিল্প সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের শিলিগুড়িতে বৈঠকের কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে বন্ধ এবং ধুঁকতে থাকা চা বাগানগুলির পুনরুজ্জীবনের জন্য রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে বলে চা শিল্প মহলের আশা ছিল।
তবে কলকাতা ফেরার আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রীর শিলিগুড়িতে বৈঠক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠমহলে যে বার্তা দিয়েছেন তা নিয়েও উদ্বেগ বেড়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ দিন বিকেলে বাগডোগরা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে দলের নেতাদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরভোট চলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই সংশয়ের কথা জেনে, শ্রমিক সংগঠনগুলির আশঙ্কা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠকে আদৌও রাজ্য সরকারি আধিকারিকরা যোগ দেবেন তো! তবে অন্য একটি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠক পিছিয়ে আগামী মে মাসে হতে পারে। তবে সেই বৈঠকেও রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলি।
তৃণমূল টি প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাস ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়টি বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। বৈঠক হলে আমরা যাব। শিলিগুড়িতে পুরভোট চলাকালীন এই বৈঠক যে সম্ভব নয়, তাও জানাব। গত অক্টোবর মাসে আমরা বেশ কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। আলোচনার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইব সেই প্রস্তাবগুলি কতদূর এগেলো।’’
চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্যে এলেও রাজ্য সরকারের কোনও শীর্ষ আধিকারিক দেখা করতে যাননি। চা নিয়েও কেন্দ্রের সঙ্গে একই রকম সংঘাতের পথে রাজ্য হাটলে আখেরে চা শিল্পেরই ক্ষতি হবে বলে মনে করছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলি। ২৬টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম বলেন, ‘‘রাজ্য এবং কেন্দ্র দু’পক্ষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করলে, চা শ্রমিকদের কোনও আশার কারণ নেই। আশা করছি মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চই সদর্থক ভূমিকা নেবেন। তবে, আমরা তো আশা করেছিলাম, বীরপাড়ার সভা থেকে বন্ধ বাগান খোলার কোনও বার্তা থাকবে। তা না শুনে, বন্ধ বাগানগুলির ভবিষ্যত নিয়েও আশঙ্কা থেকেই গেল।’’
মুখ্যমন্ত্রী চাইলে চা বাগান খুলতে কেন্দ্র সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে দার্জিলিঙের সাংসদ তথা লোকসভার নীতি নির্ধারক কমিটির চেয়ারম্যান সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া দাবি করেছেন। এ দিন সাংসদ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেমনই আচরণ করুন না কেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের চা শ্রমিকদের সাহায্য করতে কেন্দ্র প্রস্তুত। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এখন রাজ্য কী করে সেটাই দেখার।’’ তৃণমূল শ্রমিক নেতা অলকবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘বন্ধ চা বাগান খুলতে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রকেও এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে।’’