ফের শুরু অশোক-গৌতম তরজা

পুজোর পর থেকে শিলিগুড়ি পুরসভার বাম বোর্ডের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শিলিগুড়ি পুরসভার তৃণমূলের কর্মী সংগঠনকেও কোর কমিটি গঠন করে নানা দাবিদাওয়ায় আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০২:০৯
Share:

তৃণমূল প্রভাবিত পুর কর্মীদের সম্মেলনে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

পুজোর পর থেকে শিলিগুড়ি পুরসভার বাম বোর্ডের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শিলিগুড়ি পুরসভার তৃণমূলের কর্মী সংগঠনকেও কোর কমিটি গঠন করে নানা দাবিদাওয়ায় আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আন্দোলনের জন্য যাতে কাজ বন্ধ না হয় অথবা পুরসভা অচল না হয় সে নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। গত মে মাসে শিলিগুড়ির মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য।

Advertisement

পুরসভার নানা বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং মেয়রের প্রশাসনিক বৈঠকও হয়েছে। গত মাসে উত্তরকন্যায় সেই বৈঠকের পরেও মন্ত্রী এবং মেয়রের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা চলছেই। রবিবার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের পুরকর্মী সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভায় মেয়রের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং ইচ্ছে মতো খরচের নানা অভিযোগও তুলেছেন মেয়র। সেই অভিযোগে পুরকর্মীদের আন্দোলনের নির্দেশও দিয়েছেন মন্ত্রী। পুরকর্মীদের আন্দোলনের সঙ্গেই পুজোর পরে বামেদের পুরভোটের ইস্তাহারে থাকা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি কার্যকর করার দাবিতে তৃণমূল লাগাতার আন্দোলন করবে বলে মন্ত্রী গৌতমবাবু হুমকি দিয়েছেন।

মন্ত্রীর হুমকি দেওয়াকে ‘রাজধর্মে’র পরিপন্থী বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে বামেরা। সরকারের মন্ত্রী হিসেবে পুরসভার মতো স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে সাহায্য করার পরিবর্তে পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে পুরকর্মীদেরই আন্দোলনের নির্দেশ দেওয়া ‘রাজধর্ম পালন’ নয় বলে অভিযোগ। এ দিন অবশ্য সচেতন ভাবেই আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। পুরকর্মীদের সভায় তিনি সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে আমি যেমন মন্ত্রী তেমনিই একটি দলের কর্মীও। আমি এখানে মন্ত্রী হিসেবে নয়, তৃণমূল কর্মী হিসেবেই বাম পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নির্দেশ দিচ্ছি।’’

Advertisement

একজন নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে শিলিগুড়িতে বোর্ড গড়েছে বামেরা। নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে বোর্ড গড়ার চেষ্টা করেছিল তৃণমূলও। দলের অন্দরের খবর, শিলিগুড়ি পুরসভা হাতছাড়া হওয়ায় দলের জেলা সভাপতি হিসেবে মন্ত্রীর গৌতমবাবুর বিরুদ্ধেই দায় চাপিয়েছিল তৃণমূলের একাংশ নেতা কর্মীরা। অন্য দিকে, শিলিগুড়ি দখলের পরে আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে বাম শিবির যথেষ্ট উজ্জীবিত। সে কারণেই একদিকে, পুরসভার বাম বোর্ডকে বেকায়দায় ফেলা এবং অন্য দিকে বিধানসভা ভোটের আগে পুরভোটে হারের সমালোচনা ঢাকতে দলের জেলা সভাপতি হিসেবে গৌতমবাবু আক্রমণাত্মক হতে চাইছেন বলে দলেরই একাংশ মনে করছে।

পুরসভায় কী দাবিতে আন্দোলন হবে তাও এ দিন বেঁধে দিয়েছেন গৌতমবাবু। এ দিন তৃণমূলের পুরকর্মীদের সভায় মন্ত্রী সরাসরি মেয়র অশোকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘মেয়র শপথ নিয়ে বলেছিলেন, সরকারি গাড়ি নেবেন না। এখন সরকারি গাড়ি চড়ছেন, নিজের ব্যাক্তিগত গাড়ি চালককে সরকারি চালক পদে নিয়োগ করেছেন। বোর্ডে কোনও আলোচনা ছাড়াই চেয়ারম্যানের সহায়ক নিয়োগ হচ্ছে, মেয়র পরিষদের ঘরগুলিকে বিলাসবহুল করা হচ্ছে। খরচ কমানোর কথা বলে অস্থায়ী শ্রমিকদের একদিন কাজ কমিয়ে দিলেও, মেয়র নিজের ইচ্ছে মতো সরকারি অর্থ খরচ করে চলেছেন। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে।’’ পুরকর্মীদের কোর কমিটি গঠন করে, দলের অভিজ্ঞ কাউন্সিলর, জেলা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী।

এ দিনের সভায় মন্ত্রী দাবি করেছেন, পুরভোটের ইস্তাহারে বামেরা শিলিগুড়িতে জলকর তুলে দেওয়া, বিভিন্ন কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাঁর হুমকি, ‘‘পুজোর মধ্যে শিলিগুড়ি যদি জলকরমুক্ত না হয়, অন্য সব করের হার যদি না কমে তবে লাগাতার আন্দোলন হবে। বাম বোর্ড মানুষকে প্রতারণা করতে পারবে না।’’

মেয়র অশোকবাবু অবশ্য পাল্টা প্রতিরোধের তত্ত্বও দিয়েছেন এ দিন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কিছুই একতরফা হতে পারে না। তৃণমূল যদি পুরসভায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তবে সাধারণ বাসিন্দারা প্রতিরোধ করবে। সবে দু’মাস হল বোর্ড গঠন হয়েছে। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি। কিছু ক্ষেত্রে সীমাবন্ধ রয়েছে। সবই মানুষকে বোঝাবো।’’ মন্ত্রীর তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ সব মিথ্যে কুরুচিকর অভিযোগের উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধছে। সরকারি কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করাই নিয়ম। কে গাড়ি চালাবে সেটা তো মেয়রেরই ঠিক করার কথা। আর এগুলি শুধু আমাকে আক্রমণ, অপমান নয়। সাধারণ মানুষকে অপমান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন