গৌতম দেব। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতে বড় ব্যবধানে জয়ের পর উল্লসিত বিজেপি শিবির। দলীয় সূত্রের খবর, গত ২৩ মে গণনার পর ২-৩ দিন বিজয় মিছিল, চড়ুইভাতির রেশ কাটার পরেই দলবদলের হাওয়া বইতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকায়। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকা থেকেই শিলিগুড়িকে ঘিরে বড় সংখ্যক নেতানেত্রীদের দলবদলের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মোটামুটি তৈরি বিজেপি শিবির।
দলীয় সূত্রের দাবি, গত কয়েক দিনে এলাকার তৃণমূলের এক প্রাক্তন কাউন্সিলর, এক শ্রমিক নেতা, ব্লকের একজন সংখ্যালঘু নেতা ছাড়াও এক যুব নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। এদের মধ্যে ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর, যুব নেতার দলবদলের আলোচনা অনেক দূর গড়িয়েছে।
ইতিমধ্যে গেরুয়া নেতাদের তৎপরতার খবর তৃণমূল শিবিরে খবর পৌঁছে গিয়েছে। দলের একাংশ ওই নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে দলবদল আটকাতে চাইছেন। অন্য জন অবশ্য মনে করছেন, বর্তমানে বিজেপির যে হাওয়া উঠেছে, তাতে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে না। তাই তাঁরা বলেছেন, ‘‘যারা স্রোতে ভাসতে চায়, তারা যাক। দল হাল্কা হবে। এতে আগামীতে দল মজবুত হবে। দলে থেকে বিজেপি করাটা বরং মারাত্মক।’’ দার্জিলিং জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘যাঁরা অন্য দলে যেতে চান, যেতে পারেন। আমরা তো কাউকে আটকে রাখিনি। বিজেপিতে গেলে মনে হয় ব্রহ্মদর্শন হবে।’’
ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি এলাকার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পুরসভার ১৪টি ওয়ার্ডের অধিকাংেশ কিছু দিন আগে পর্যন্তও শক্তিশালী ছিল তৃণমূল। কিন্তু ভোটের ফলের পর হিসেব নিকেশ পাল্টাতে শুরু করেছে। জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের অংশ এলাকাটির, ব্লক স্তর থেকে পঞ্চায়েত স্তরে অবধি বিভিন্ন নেতার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তৃণমূলের অন্দরমহল সূত্রের খবর, এক ব্লকের নেতা ঘনিষ্ঠমহলে পদত্যাগ করতে চান। আর এক জনে অভিযোগ, দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কাছে কোণঠাসা হয়ে থেকে তাঁরা এ বার ভোটে দলের হয়ে সঠিকভাবে কাজই করেননি। ‘বিজেপি আসছে, বিজেপি আসছে’ বলে অনেকে পরোক্ষভাবে বিজেপি’র হয়ে প্রচার করেছেন। আর ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ভোটারদের মন বোঝা বা বামেদের ভোট বিজেপি যাওয়ার বিষয়টি ঠিক মতোই টেরই পাননি।
আর ভোটের ফল নিয়ে উল্লাস কমতেই তাই বিভিন্ন শাসক দলের নেতাদের দিকে হাত বাড়ানো শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ভাঙন কতটা বাড়বে, সেটা এখনও আন্দাজ করতে পারছেন না কেউই।
এর আগে ওই অঞ্চল থেকে দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেত্রী শিখা চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। মুকুল রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ট শিখাদেবী। তৃণমূলের একটি অংশ সেখানেও যোগাযোগ শুরু করেছেন। যে প্রাক্তন কাউন্সিলরের নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি এনজেপি এলাকায় অনেকদিন ধরেই কোনঠাসা। তাঁর আত্মীয় ওই যুব নেতা। গোষ্ঠী কোন্দলে একই অবস্থায় ব্লকের এক সংখ্যালঘু নেতারও। পদ দায়িত্ব থাকলেও তিনি দলের মর্যাদা আর পাচ্ছেন বলে ঘনিষ্ট আক্ষেপ করে বসেছে।
বিজেপি নেতাদের দাবি, সবে তো শুরু ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি দিয়ে আমরা শহরে ঢুকছি। বাকিটা শিলিগুড়ি শহর তো বটেই মহকুমার মাটিগাড়া, নকশাবাড়ি, খড়িবাড়ি তো পড়েই রয়েছে। তৃণমূলের কী হাল মানুষ দেখবেন! তবে শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিৎ রায় চৌধুরী বলেছেন, ‘‘অনেক চমক বাকি। তবে এরা সবাই ভোটের রেজাল্ট দেখে দল বদলাতে চাইছে। তাই আমরা একটু যাচাই তো করবই।’’