পরীক্ষার মাঝেই প্রসবযন্ত্রণা, হার মানলেন না সদ্যপ্রসূতিও

বুধবার বিকেলেই ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মাজুমা। বেশ কয়েকটি সেলাইও পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হরিশ্চন্দ্রপুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৮
Share:

জেদী: পরীক্ষা দিল মাজুমা। —নিজস্ব চিত্র

সোজা হয়ে বসার ক্ষমতা নেই। দু’পা ছড়িয়ে বসে তিনি। কোলের উপরে রাখা পরীক্ষার খাতা। পাশে সদ্যোজাত ছেলেকে কোলে বসে রয়েছেন দিদিমা। সন্তানের জন্ম দেওয়ার ১৪ ঘণ্টা বাদে এ ভাবেই হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিলেন একজন। অন্য জন আবার পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর ভর্তি হলেন হাসপাতালে। যন্ত্রণা উপেক্ষা করে সেখানেই পুরো সময় পরীক্ষা দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার এই দুই সাহসী কন্যার পরীক্ষার সাক্ষী হয়ে রইল মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল।

Advertisement

দুই ছাত্রীর একজন মাজুমা খাতুন ও অন্য জন মুরসেদা খাতুন। বুধবার বিকেলেই ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মাজুমা। বেশ কয়েকটি সেলাইও পড়েছে। পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। কিন্তু পরীক্ষা না দিলে সারাবছরের পড়াশোনা বৃথা যাবে ভেবে সব উপেক্ষা করেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জেদ ধরেন মাজুমা। হাসপাতাল থেকে ছাড়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকও। তাই হাসপাতালেই তাঁর পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়। মাজুমা জানান, ছেলের মুখ দেখে মনের জেদটা আরও বেড়ে গিয়েছে। সংসার সামলে সারাবছর পড়াশোনা করেছি। তারপর পরীক্ষা না দিলে একটা বছর নষ্ট হয়ে যেত।

মাজুমার বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের দারোল গ্রামে। দু’বছর আগে সুলতাননগরের বাবর আলির সঙ্গে বিয়ে হয় মাজুমার। বাবর কৃষিকাজ করেন। কিন্তু বিয়ের পর লেখাপড়া ছাড়েননি মাজুমা। তিনি জানালেন, উৎসাহ যুগিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনও। সুলতাননগর হাসিনা হাই স্কুলের ছাত্রী মাজুমার পরীক্ষাকেন্দ্র হরিশ্চন্দ্রপুর হাই স্কুল। বুধবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় তাকে পরিজনেরা হাসপাতালে ভর্তি করান। বুধবার বিকেলে তাঁর স্বাভাবিক প্রসব হয়। এ দিন পরীক্ষা দিতে বসেও ছেলেকে মাঝেমধ্যে খাইয়েছেন। তার কান্নাও থামাতে কোলেও নিতে হয়েছে। তারপরেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করেছেন।

Advertisement

মুরসেদাও সুলতাননগর হাসিনা হাই স্কুলেরই ছাত্রী। কিন্তু হরিশ্চন্দ্রপুর হাই স্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হওয়ার একঘণ্টা বাদে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর। ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পরে তিনিও পরীক্ষা দিতে চেয়ে জেদ ধরেন।

চিকিৎসক ছোটন মণ্ডল বলেন, ‘‘দু’জনের যা শারীরিক পরিস্থিতি, তাতে অদম্য মনের জোর না থাকলে এ ভাবে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।’’

আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার হরিশ্চন্দ্রপুর সেন্টার কমিটির সম্পাদক মোফিজুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ওঁরা হাসপাতালে পরীক্ষা দিতে চায় জেনে সেই বন্দোবস্ত করা হয়। দু’জনেই সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন