রাস্তায়: শিলিগুড়ির পঞ্চনইয়ে মোর্চার বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
পাহাড়ে এ দিন জিটিএ চুক্তি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানাল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। একই ভাবে সেই প্রতিবাদ আন্দোলন সমতলে ছড়িয়ে দিতে গিয়ে ধাক্কা খেলেন মোর্চা নেতৃত্ব। ছ’বছর আগে যে পিনটেল ভিলেজে বসে এই চুক্তি সই হয়েছিল, তার সামনেও এ দিন বিক্ষোভ দেখাতে যান মোর্চা সমর্থকেরা। কিন্তু হাতে গোনা সমর্থক হাজির ছিলেন সেখানে। ফলে সমতলে যে মোর্চার সমর্থন আগের মতো নেই তা বোঝাই গিয়েছে।
গত রবিবার শিলিগুড়িতে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হয়েছে বাংলা ভাগ আটকানোর পক্ষে। তার পরে এ দিন পিনটেল ভিলেজ লাগোয়া অধম সিংহ নগরে মোর্চার জিটিএ চুক্তি পোড়ানোর আন্দোলনে চোখে পড়ার মতো কম লোক ছিল।
২০১১ সালে এই পিনটেল ভিলেজেই জিটিএ চুক্তি সই হয়। সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোর্চার আন্দোলন যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের বক্তব্য, ২০০৭, ২০১৩ সালে মোর্চা নেতৃত্বের ডাকে পিনটেল ভিলেজের সামনে হাজার হাজার লোক জমায়েত হয়েছিলেন। সুকনা, শালবাড়ি, মেথিবাড়ি-সহ একাধিক এলাকা থেকে তাঁরা দলে দলে এসে যোগ দিয়েছেন। তা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে লাঠিচার্জ হয়েছে। চলেছে কাঁদানে গ্যাসও।
কিন্তু এ দিন ছবিটা ছিল উল্টো। মোর্চার জমায়েতে কর্মীদের সংখ্যা দেড়শোও ছুঁতে পারেনি। সেই তুলনায় পুলিশের নানা পদস্থ অফিসার-সহ বাহিনী ছিল প্রচুর। ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠলে রাস্তা অবরোধের মামলার আশঙ্কায় টয়ট্রেনের লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে আলাদা রাজ্যের সমর্থনে ঘণ্টাখানেক স্লোগান দিয়ে, চুক্তি পুড়িয়ে ফিরে যান মোর্চা কর্মীরা। তাঁরা জাতীয় সড়কে না আসায় পুলিশি ব্যারিকেডের পর্যন্ত দরকার পড়েনি।
মোর্চা সূত্রের খবর, সোমবার থেকেই জমায়েতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু পাহাড়ের আন্দোলনের আঁচ তরাই-ডুয়ার্সে ছড়ালে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে, তা সরকারের তরফে আগাম জানানো হয়েছে। তা ছাড়াও তরাইয়ের কর্মীরা আন্দোলনকে সমর্থন করলেও জোট বেঁধে রাস্তা নেমে এখনই কিছু করাটা ঠিক হবে না বলে নেতাদের জানান। কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, চুক্তি পোড়ালেই তো জিটিএ বন্ধ হবে না। উল্টে সরকার এ বার অডিট পুড়িয়ে প্রশাসক বসিয়ে জিটিএ চালাতে পারে।
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিশাল ছেত্রী, তরাই শাখার সভাপতি শঙ্কর অধিকারী এবং যুব নেতা হেমন্ত গৌতম এ দিনের জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন। শঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা এখন রাজ্য চাই, আর কিছু নয়। আগামী দিনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাজ্যের সমর্থনে প্রচার করব।’’
এই প্রসঙ্গে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘টানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে, দুর্নীতি করে এখন চুক্তি পোড়ালে তো হবে না। মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে এ সব করা হচ্ছে। সরকার আইন মেনে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।’’ তিনি আরও জানান, সরকার বারবার বলছে বন্ধ, অশান্তি বন্ধ করে আলোচনায় আসতে। আলোচনার দরজা খোলাই রয়েছে।