আগাম প্রচার শুরু করে হোঁচট মন্ত্রীর, প্রার্থী করল না দল

দল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার আগেই পুরভোটে দাঁড়াচ্ছেন ধরে নিয়ে সাত দিন আগে থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তৃণমূলের ঘরে-বাইরের অনেকেই তখন ভেবেছিলেন, সব ঠিকঠাক চললে বর্তমানে মন্ত্রী সহ ১৪টি সরকারি পদে থাকা গৌতমবাবুর টুপিতে ১৫ নম্বর পালক শিলিগুড়ির মেয়রপদটিও জুড়ে যেতে পারে। কিন্তু বাধ সাধল সেই দলই। বুধবার কলকাতায় দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন, একমাত্র মালদহে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ছাড়া রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকে তৃণমূল পুরভোটে প্রার্থী করছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৭
Share:

গৌতম দেব

দল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার আগেই পুরভোটে দাঁড়াচ্ছেন ধরে নিয়ে সাত দিন আগে থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তৃণমূলের ঘরে-বাইরের অনেকেই তখন ভেবেছিলেন, সব ঠিকঠাক চললে বর্তমানে মন্ত্রী সহ ১৪টি সরকারি পদে থাকা গৌতমবাবুর টুপিতে ১৫ নম্বর পালক শিলিগুড়ির মেয়রপদটিও জুড়ে যেতে পারে। কিন্তু বাধ সাধল সেই দলই। বুধবার কলকাতায় দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন, একমাত্র মালদহে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ছাড়া রাজ্যের কোনও মন্ত্রীকে তৃণমূল পুরভোটে প্রার্থী করছে না।

Advertisement

গত ১১ মার্চ শিলিগুড়ির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে প্রচার শুরু করেছিলেন গৌতমবাবু। ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় দলের ঘোষণায় গৌতমবাবুর সেই আশায় দাঁড়ি পড়ল। মুখে অবশ্য গৌতমবাবু জানিয়েছেন, তিনি ‘হতাশ’ নন। এ দিন বিকেলে তাঁর বক্তব্য, “দলের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে চলতেই হবে। তবে আমাদের বোর্ড হলে আমরা তাদের গাইড করব। তাই হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

এর আগেও গৌতমবাবুর হাত থেকে শিলিগুড়ির মেয়র পদ ফস্কে গিয়েছিল। পাঁচ বছর আগে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে মেয়র পদ প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়েও কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্তের কাছে তিনি হেরে যান। সে যাত্রায় বামেদের সমর্থনে গঙ্গোত্রী দেবী মেয়র হয়েছিলেন। এবার তাঁর অনুগামীদের আশা ছিল, দল জিতলে গৌতমবাবুই মেয়র হবেন। তাই আগ বাড়িয়ে প্রচারেও নেমে পড়েছিলেন খোদ মন্ত্রীই। সে কারণে দলেই বিপক্ষ শিবির তাঁকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি। তাঁদের বক্তব্য, দলনেত্রীর অনুমোদনের আগেই অত বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রণাম করে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে দেখানোর কী দরকার ছিল মন্ত্রীর? মন্ত্রীর কাণ্ডে দলের ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা তৃণমূলের একাংশ মনে করছে। শুধু তাই নয়, দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই নিজেকে তিনি প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে প্রচারে নামায় তৃণমূলেই প্রশ্ন উঠেছিল, ‘মন্ত্রী কি তাহলে দলের ঊর্ধ্বে?’

Advertisement

বিরোধীরাও এই সুযোগে বিঁধছেন মন্ত্রীকে। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের টিপ্পনি, “অন্য কারও কথা বলতে পারব না। থালায় চোদ্দ পদ থাকলে পনেরো নম্বরের জন্য আমি অন্তত খাই-খাই করতে যাব না।”

তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর অনুগামীদের বক্তব্য, গৌতমবাবু শহরে রাস্তাঘাটের যে উন্নতি করেছেন, তাতে তিনি না দাঁড়ালেও তাঁকে সামনে রেখেই লড়তে হবে। কিন্তু কৃষ্ণেন্দুবাবু দাঁড়ানোর অনুমতি

পেলেন আর তিনি পেলেন না, তার কারণ কী? গৌতমবাবুর বক্তব্য, “কৃষ্ণেন্দুবাবু দাঁড়াতে পারেন, কেননা তিনি পুরসভার চেয়ারম্যান। তা ছাড়া আমি মেয়র হিসাবে উন্নয়ন কাজ করিনি।” গত সোমবার দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন নিতে শিলিগুড়ির ৪৭টি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে কলকাতায় গিয়েছিলেন গৌতমবাবু। সে সময়েই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি নিজে দাঁড়াতে পারবেন না। বুধবার সকালে তিনি শিলিগুড়িতে ফিরেছেন।

ঘটনাচক্রে, এদিনই নজিরবিহীন ভাবে বামেরা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। গৌতমবাবুকে মেয়রপদে তুলে ধরে তৃণমূল ভোটে লড়বে বলে ধরে নিয়েই অশোকবাবুকে সেনাপতি ঘোষণা করা হয় বলে অনেকে মনে করেছেন। অশোকবাবু অবশ্য গৌতমবাবুর খবর শুনে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের মন্তব্য, “দল টিকিট দিল না, না কি তিনি নিজেই রণে ভঙ্গ দিলেন--সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।”

এই মুহূর্তে গৌতমবাবু মন্ত্রী ছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যানের মতো বিধিবদ্ধ সংস্থার শীর্ষ পদে রয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার আইসিডিএস কমিটির চেয়ারম্যান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য এবং ওই দুই হাসপাতাল সহ দার্জিলিং ইডেন হাসপাতাল, শিলিগুড়ি হাসপাতাল, জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিরও চেয়ারম্যান। শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চ কমিটির চেয়ারম্যান এবং কোচবিহার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড কমিটির চেয়ারম্যানের পদেও রয়েছেন মন্ত্রী। গত সপ্তাহেই এক নাগরিক সভায় শহরের এক বাসিন্দা তাই সরাসরি মন্ত্রীকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, “আপনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে দেখা করার সুযোগ পাওয়া যাবে তো?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন