Mid Day Meal

আনাজ আগুন, মিড-ডে মিলের পাতে তরকারি উধাও

সমস্যায় রয়েছে জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্কুলগুলিও। জলপাইগুড়ির প্রায় ত্রিশ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা একশোর নীচে।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু , অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫০
Share:

শিলিগুড়ি লাগোয়া কাওয়াখালি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে মিড-ডে মিলের পাতে টান পড়েছে তরকারির। ছবি: বিনোদ দাস

কোনও দিন ডাল, আলু ভাজা, সঙ্গে আচার। কোনও দিন আলু-ছোলার তরকারি সঙ্গে আচার। কোনও দিন সয়াবিনের ঝোল। তাও কম আদা, লঙ্কা দিয়ে। শিলিগুড়ির বিধাননগরের রূপরামগছ মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে কচিকাঁচাদের মিড-ডে মিলের এমনই মেনু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।

Advertisement

আনাজের দামে আগুন। তাই শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির অনেক মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মিড-ডে মিলে আনাজ উধাও। সয়াবিন, আলু, ছোলার তরকারি ভরসা। আদা, লঙ্কার দামের ঝাঁঝে ডিমের ঝোলও পানসে হয়েছে। অতিরিক্ত পুষ্টি দিতে পড়ুয়াদের সপ্তাহে এক দিন করে ফল, ডিম বা মাংস খাওয়ানোর কথা। ফলের যা দাম তার উপরে প্রধানমন্ত্রী পোষণ অতিরিক্ত পুষ্টির খাতে বরাদ্দের টাকা এপ্রিলের পর আসছে না। তাই সে খাবারও দিতে পারছেন না শিক্ষকেরা।

ভাত, ডাল এবং আলু সেদ্ধ। এই রান্নায় কোনও আনাজের প্রয়োজন নেই। আলুর দামও যথেষ্ট বেশি। তাই গোটা আলু সেদ্ধ করে অর্ধেক করে শিশুদের পাতে দেওয়া হচ্ছে জলপাইগুড়ি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে। একটি নয়, একাধিক শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে আসা শিশুদের পাতে সপ্তাহে এক দিন এমনই পদ থাকছে। জলপাইগুড়ি শহরেরই এক শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকার কথায়, “আনাজের যা দাম, তাতে খিচুড়ি খাওয়ানো সম্ভব নয়। ভাতের সঙ্গে তরকারি দেওয়াও যাচ্ছে না। ঝোল দিতে হলেও তো অন্তত কাঁচালঙ্কা চাই।”

Advertisement

শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি রথখোলায় বিধুবালা মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক সুকুমার দত্ত বলেন, ‘‘আনাজ এবং আদা, লঙ্কার যা দাম তাতে রান্নার দায়িত্বে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তরকারি করতেপারছেন না। রান্নার মান নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিন ঝগড়া হচ্ছে। বাজারে আনাজের যা দাম, তাতে কী ভাবে করবেন ওঁরা, সেটাও বুঝতে পারছি।’’ রূপরামগছ মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক কৃষ্ণকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘দামের জেরে আনাজের তরকারি করাই যাচ্ছে না।’’ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক প্রেমকুমার বরদেওয়া বলেন, ‘‘মহকুমাপ্রশাসন থেকে মিড-ডে মিলের বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’

ময়নাগুড়ির এক শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকার প্রশ্ন, “কুড়ি জনের ডিমের ঝোল রাঁধতে চারটে টোম্যাটো তো অন্তত দিতেই হয়। তা-ও দামে কুলোয় কোথায়? সরকারি বরাদ্দই তো নেই।” সমস্যায় রয়েছে জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্কুলগুলিও। জলপাইগুড়ির প্রায় ত্রিশ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা একশোর নীচে। সেই সব স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করতে বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। ডিমের ঝোল রান্না হলেও তাতে আলু থাকছে না, আনাজবিহীন ডিমের ঝোলের রং হচ্ছে ফ্যাকাসে।

প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-এর জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদক বিপ্লব ঝা বলেন, “বহু প্রাথমিক স্কুলে সপ্তাহে এক-দু’দিন সেদ্ধ ভাত দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, আর উপায় নেই। দ্রুত মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ানো হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন