শর্মিলার প্রেমে পড়েছে বাঁয়া গণেশ। হাঁটুর বয়সী, তবু জংলি গণেশ ডাক দিলে ষাটোর্দ্ধ কুনকি শর্মিলা নিজেকে আর যেন ধরে রাখতে পারছে না।
মত্ত প্রেমিককে ঠেকাতে বন্দুক ও পটকা নিয়ে তৈরি হয়ে রয়েছেন বনকর্মীরা। তাতে অবশ্য বাধ মানছে না। মাঝে মধ্যেই জঙ্গল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে গণেশের প্রেম। বাধ্য হয়ে শর্মিলার পায়ে পড়েছে বেড়ি। বমকর্মীদের দাবি, তাতেও সামাল দেওয়া ভার। তাই বারুদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। মাঝে মধ্যেই জলদাপাড়ার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সে।
এক দিকে চোরাশিকারিদের ঝামেলা তার উপর ওই হস্তী-প্রেম। নাজেহাল অবস্থা বন দফতরের। হস্তী-বিশারদ ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী বলেছেন, “হাতিদের প্রেমের কোনও বয়স নেই। বাছবিচারও নেই। বহু বছর আগে একবার দক্ষিণবঙ্গে এই ধরণের কাণ্ড ঘটিয়েছিল এক হস্তী দম্পতি।” কয়েক বছর আগে মাকনা নামে এক জংলি পিলখানার জেনির প্রেমে পড়েছিল। সে সময় সার্কাসের সাবিত্রী আর জংলি সত্যবানের প্রেম-কাহিনী এখনও মনে আছে জলদাপাড়ার।
বাঁ দাঁত ভাঙা, তাই বুনো গণেশের নাম বাঁয়া গণেশ। তবে তার স্বভাব ভাল নয়। দলছুট ওই হাতিটি একাই দাপিয়ে বেড়ায় জঙ্গল। বছর দুয়েক আগে জলদাপাড়ায় এসে আশপাশের গ্রামগঞ্জে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে সে। রাতের অন্ধকারে গ্রামে ঢুকে ঘর বাড়ি লণ্ডভণ্ড করে বনে ফিরে যায় গণেশ। তবে এই বসন্তে নতুন সংযোজন এই প্রেম। জলদাপাড়ার পশ্চিম রেঞ্জের ময়রাডাঙা বিটের পিলখানা থেকে দিন পনেরো আগে পাশের বুড়ি তোর্সা নদীতে স্নানের সময়ে বাঁয়া গণেশের মনে ধরে শর্মিলাকে। স্নান শেষে শর্মিলার পিছু হাঁটতে থাকে সে। বাঁয়া গণেশের ভাবগতিক ভাল না ঠেকায় সে যাত্রায় কোনও মতে শর্মিলা কে পিলখানায় নিয়ে আসতে পেরেছিলেন মাহুত। সে দিনের পর থেকে শর্মিলাও মন উড়ু উড়ু। শোনপুর মেলা থেকে সেই ছোট্ট বেলায় নিয়ে আসা হয়েছিল শর্মিলাকে। তবে জীবনে কোনও দিন প্রেম জোটেনি তার। তাই মা-ও হতে পারেনি সে। বন দফতরের কোন কুনকি মা হলে নতুন হাতিকে লালন পালন করতে অনেক খরচ। সেই খরচ বাঁচাতে কর্তাদের নির্দেশে কোন হাতি যাতে মা না হয় সে দিকে কঠোর নজরদারি।