সংঘর্ষের জেরে উদ্বেগ পড়াশোনা নিয়েই

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মতবিরোধের জেরে কলেজে মাঝে মধ্যেই গণ্ডগোল বাঁধে। মারপিটও হয়। বিস্তর চেষ্টা করেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা তা আটকাতে পারেন না। তাই ইসলমাপুর কলেজের পড়াশোনার পরিবেশ কতটা থাকবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকদের অনেকেই।

Advertisement

অভিজিৎ পাল

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৪১
Share:

ঘটনার পরে আতঙ্কের ছাপ এক ছাত্রীর চোখেমুখে।ছবি:নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মতবিরোধের জেরে কলেজে মাঝে মধ্যেই গণ্ডগোল বাঁধে। মারপিটও হয়। বিস্তর চেষ্টা করেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা তা আটকাতে পারেন না। তাই ইসলমাপুর কলেজের পড়াশোনার পরিবেশ কতটা থাকবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকদের অনেকেই। উপরন্তু, পুলিশের সামনেই যে ভাবে লাঠিসোটা নিয়ে দু-দল ছাত্র মারপিট, ভাঙচুর করছেন সেটা টিভিতে দেখেও আঁতকে উঠেছেন অনেকে। কয়েকজন পড়ুয়া নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘‘টিএমসিপির নিজেদের গোলমাল না থামলে কলেজ শান্ত হবে না। পড়াশোনা ঠিকঠাক হবে না। তাই অন্য কলেজে ভর্তির কথা ভাবতে হবে।’’ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌর ঘোষ বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে আমিও দুর্ভাবনার মধ্যে রয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে আগামী শনিবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

কলেজের পঠনপাঠন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেই। ছাত্র সংসদের দখল নিতে জেলা নেতাদের কয়েকজন প্রথম থেকেই সক্রিয় হয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। সেই নেতাদের রেষারেষিতেই এ দিন রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইসলামপুর কলেজ। কলেজ রাজনীতি থেকে নেতারা সরে না দাঁড়ালে, গোলমাল থামানো সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন অভিভাবকরা। কলেজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন সন্ধ্যেতে ইসলামপুর, চোপড়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ইসলামপুরের অপ্সরা মোড়ে এক নেতার জমিতে বিপক্ষ গোষ্ঠীর লোকেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। চোপড়াতে এক নেতার বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে শুরু করায় কলেজ খোলার পরেও তার প্রভাব পড়তে পারে।

আহত পুলিশকর্মী। ছবি:নিজস্ব চিত্র

Advertisement

আগামী মাস থেকেই কলেজের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। তার আগে ক্লাস বন্ধ থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠনে ক্ষতি হবে। কলেজ চললেও আতঙ্কের পরিবেশ থাকলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শিক্ষকদের অনেকে।

যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একটি সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে শাসক দলে যোগ দিয়েছে। অন্য অংশটি পুরনো তৃণমূল। একটি গোষ্ঠীর নেতা কানাইয়ালাল অগ্রবাল। অন্য গোষ্ঠীটি প্রাক্তন বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীর অনুগত। গোলমালে দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন জখম হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে জখম হন পাঁচ পুলিশকর্মীও। ২৮ জানুয়ারি ওই কলেজের ৪৪টি আসনে টিএমসিপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেলেও তার আগে থেকেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে কানাইয়াবাবুর গোষ্ঠীর সঙ্গে করিমবাবুর গোষ্ঠীর টিএমসিপি সমর্থকদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

অভিভাবকদের দাবি ছাত্র রাজনীতিতে বহিরাগতদের উপস্থিতি রোখা না হলে পড়াশোনা সম্ভব নয়। কী বলছেন তৃণমূলের নেতারা?

ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘ছাত্ররা ছাড়া অন্য কেউ যেন কলেজের ভোটে নাক না গলায় তার জন্য প্রশাসনকে আগেই দাবি জানানো হয়েছিল। সকলের এই উপলব্ধি না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে গোলমাল চলতেই থাকবে।’’ চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান বলেন, ‘‘ছাত্ররা নিজেরা ভোট করবে এটাই কলেজের রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু কিছু নেতা এ সব মানে না বলেই গোলমাল তৈরি।’’ প্রাক্তন মন্ত্রী করিম চৌধুরী মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় যোগাযোগ করা যায়নি। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, ছাত্র রাজনীতিতে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ আটকাতে বিভিন্ন দলের নেতারা নানান দাবি করলেও বাস্তবে উল্টো চিত্র দেখা যায়। সে কারণেই কলেজে পড়াশোনার পরিবর্তে থেকে আতঙ্কের পরিবেশ বজায় থাকছে বলে শিক্ষানুরাদীদের আক্ষেপ। ইসলামপুর কলজে ক্যম্পাসে কবে আতঙ্কমুক্তি হবে সেটাই এখন প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন