শিলিগুড়িতে বৃষ্টি। নিজস্ব চিত্র।
তিনধারিয়ায় পাগলাঝোরার ধারেও কাশফুল দুলছে। যেমন দোলা লেগেছে গজলডোবার ‘ভোরের আলো’য় তিস্তার চরের কাশবনে। ফারাকটা শুধু কাঁপুনির। তিনধারিয়ায় বাতাসে মৃদু কেঁপে উঠছে শরীর। হাওয়া গায়ে মেখে নিতে বেশ ভাল লাগছে তিস্তার চরে। শিশির-ভেজা হালকা ঠান্ডার রেশ সমতলেও। যেন উৎসবের শেষার্ধ্বের বিষণ্ণতা! এমনই উপলব্ধি উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলের মানুষজনের। সেই মনখারাপ আরও বাড়িয়ে দিল আবহওয়া। শিলিগুড়িতে সন্ধে থেকে কয়েক দফার বৃষ্টিতে তাল কাটল নবমীর আনন্দে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে মিলেমিশে ছিল নবমীর আনন্দ-বিষাদ। মালদহ, দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ— জেলায় জেলায় দর্শনার্থীর ঢল নামে মণ্ডপে মণ্ডপে। পুলিশ সূত্রের খবর, পুজোর ক’দিন রাতভর ঠাকুর দেখেছেন দর্শনার্থীরা।
কোচবিহারে সকাল থেকেই ছিল বিষণ্ণতা। রাজপরিবারের সদস্য দুয়ারবক্সির চলে যাওয়ার জন্য। তারই মধ্যে অবশ্য ভিড় উপচে পড়ে মণ্ডপে।
কোচবিহারে জবাড়িতে জমে ওঠে পুজোর আড্ডা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কোচবিহার রাজবাড়িতে উপচে পড়েছিল ভিড়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই যেমন কোচবিহারের বাসিন্দা, অনেকেই আবার পাশের রাজ্য অসম থেকেও এসেছেন। তাঁদেরই এক জন রতন দাসের কথায়, ‘‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছি। রাজবাড়ি আমার প্রিয় জায়গা। তাই পুজো দেখার ফাঁকে আর একবার ঘুরে গেলাম।” পুজোর ক’দিন ধরে রাজবাড়িতে ভিড় উপচে পড়ছে বলেই জানা গিয়েছে রাজবাড়ি দেখভালের কর্মীদের সূত্রে।
ভিড়ের পাশাপাশি আইন ভাঙার প্রবণতাও দেখা গিয়েছে জেলায় জেলায়। হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর ছবি দেখা গিয়েছে কোচবিহারে। মণ্ডপ ঘোরার ফাঁকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাইক চালকদের সতর্ক করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
রায়গঞ্জের পুজোমণ্ডপে দর্শনার্থীদের জনস্রোত ছিল দেখার মতো। এ দিন শহরের রাস্তায় রাস্তায় আদিবাসীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। নবমীতে রেকর্ড ভিড় হয় আলিপুরদুয়ারে। ডুয়ার্সের নানা চা-বাগানের লক্ষাধিক দর্শনার্থী ট্রাকে, ট্রাক্টরে চড়ে ভিড় জমান আলিপুরদুয়ারের পুজোমণ্ডপে। দুর্গাবাড়ি, বাবুপাড়া, স্টেশন পাড়া, উপল মুখর, হোয়াইট হাউজ়, মিলন সংঘ, আলিপুরদুয়ার জংশনের লিচুতলা যুবসঙ্ঘ পল্লিমঙ্গল, যুবসঙ্ঘ কালীবাড়িতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। গভীর রাতেও ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়।
শিলিগুড়িতে সকাল থেকেই ছিল হালকা শীতের আমেজ। পাহাড় থেকে নেমে আসা দর্শনার্থীদের পরনে সোয়েটার, জ্যাকেট। বৃষ্টিবিঘ্নিত নবমীর রাতে শিলিগুড়িতে হালকা শীতপোশাক পরে দর্শনার্থীরা ঠাকুর দেখতে বেরোন। জলপাইগুড়িতে শীতের অনুভূতি দেখা গিয়েছে মাঝরাতের পরে। ততক্ষণে এ বছরের মতো মহানবমী ফুরিয়েছে।