সচেতনতা: স্কুলমুখী করতে বোঝাচ্ছেন শিক্ষকরা। নিজস্ব চিত্র
বাবা নেই। দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার টানছেন মা। তাই গত এক বছর ধরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি আলিপুরদুয়ারের বড় পুখুরিয়া গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী দিনা হাঁসদার। পরিবর্তে সংসারের অভাব মেটাতে দিন মজুরি করতে যেত সেও।
একদিন দিনার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে এবং তাঁর মাকে পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তা আর কন্যাশ্রীর সুবিধার কথা খুলে বলেন যশোডাঙ্গা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খোকনচন্দ্র দে। এখন আবার প্রতিদিন স্কুলে যায় দিনা।
ওই গ্রামেরই বাসন্তী মুর্মূ গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অন্য বিষয়গুলিতে পাশ করলেও আটকে গিয়েছিল ইংরেজি এবং অঙ্কে। এরপরেই তাকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় তার পরিবারে। বাসন্তীর বাড়িতেও পৌঁছে গিয়েছিলেন খোকনবাবু। বোঝানোর পর এখন বাসন্তীও নিয়মিত স্কুলে আসছে। ওর মা বলছেন ‘‘মেয়ে যতটুকু পড়তে চায় পড়াব। এখনই বিয়ে দেব না।’’
শুধু বাসন্তী বা দিনা নয়, সরোজিনী, সোনা, সঙ্গীতার মতো বড় পুখুরিয়ার অন্তত দশজন স্কুলছুট মেয়ের কেউ এখন নবম, কেউ দশম শ্রেণির পড়ুয়া। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে বিয়ে দেওয়ারও তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল বাড়িতে। কিন্তু প্রধানশিক্ষক নিজে তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে স্কুলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ায় সাফল্য মিলেছে দ্রুত। খুশি অভিভাবকরাও। বড় পুখুরিয়া গ্রামের ফাগু সোরেন বলেন, ‘‘আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন যশোডাঙ্গা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। গ্রামের সব মেয়ে যাতে স্কুলে যায় সে উদ্যোগ নেব।’’
খোকনবাবু বলেন, ‘‘প্রতি বছর অন্তত ৫০/৬০ জন পড়ুয়া স্কুলছুট হয়। এতদিন আমরা অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে তাঁদের বুঝিয়ে স্কুলছুট কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। তাই এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রদের বুঝিয়ে স্কুলমুখী করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এতে হাতেনাতে সাফল্য মিলছে।’’
শুধু শামুকতলার বড় পুখুরিয়া গ্রামে নবম ও দশম শ্রেণির অন্তত দশজন আদিবাসী ছাত্রী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। এরমধ্যে তিনজনের বিয়ে হয়েছে গ্রামেই । দু’জনের বিয়ে দেওয়ারও তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল। তাদের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়েছেন। কন্যাশ্রী সহ সরকারি প্রকল্পের সুবিধার কথা তুলে ধরে তাদের সবাইকে স্কুলে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এ ব্যাপারে স্কুলের অন্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদেরও সাহায্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের বিডিও বিমান দাস বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। অন্য স্কুলগুলি এমন উদ্যোগ নিলে স্বভাবতই স্কুলছুটের সংখ্যা কমবে।’’