জংলি পিরের মাজারের মেলায় হাজির সন্ধ্যা, অঞ্জনারাও

মকর সংক্রান্তিতে পুরাতন মালদহের নেমুয়া গ্রামে জংলি পিরের মাজারে ভিড় জমান সন্ধ্যা দাস, অঞ্জনা সরকারেরা। মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সম্প্রীতির আবহে নেমুয়া গ্রামে পাঁচ দশক ধরে হয়ে আসছে মিলন মেলা।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২২
Share:

দোয়া: মাজারে ভিড় সব ধর্মের মানুষের। নিজস্ব চিত্র

তিলুয়া, খাজার সঙ্গে হাতে আস্ত একটি মুরগি। পিরের মাজারে সপরিবারে এমনই উপকরণ নিয়ে হাজির হন মান্টি দে। মাজারে মুরগি ছুঁইয়েই উড়িয়ে দিলেন তিনি। তারপরেই সেই মুরগি লাফিয়ে ধরে ফেলল সেলিম, আকবরেরা। শুধু মান্টিদেবীই নন, মকর সংক্রান্তিতে পুরাতন মালদহের নেমুয়া গ্রামে জংলি পিরের মাজারে ভিড় জমান সন্ধ্যা দাস, অঞ্জনা সরকারেরা। মাজারে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সম্প্রীতির আবহে নেমুয়া গ্রামে পাঁচ দশক ধরে হয়ে আসছে মিলন মেলা। সেই সঙ্গে চলছে হইহুল্লোড় করে পিকনিকও।

Advertisement

পুরাতন মালদহের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নেমুয়া গ্রাম। মালদহ-নালাগোলা রাজ্য সড়কের ধারে ওই গ্রামে রয়েছে পিরের মাজার। বটগাছ সহ ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে মাজারটি থাকায় লোকমুখে জংলি পিরের মাজার নামে পরিচিত। ১৯৬৩ সাল থেকে পিরের মাজারকে ঘিরে মকর সংক্রান্তির দিন মিলন মেলা হয়ে আসছে গ্রামে। ওই মাজারটি রয়েছে প্রয়াত শৈলেন্দ্র নারায়ণ মিশ্রের জমিতে। এখন সেই মাজারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন ওই পরিবারের সদস্য অমিত মিশ্র। তিনি বলেন, “মাজারটি এখানে কেউ তৈরি করে নি। কথিত আছে পির সাহেব ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে এখানে ধ্যান করেছিলেন। সেই থেকে জংলি পিরের মাজার হিসেবে মানুষ জানেন। দাদু শৈলেন্দ্র নারায়ণ আমাদের জমিটি মাজারের নামে দান করেন। তারপর থেকেই আমাদের পরিবারের লোকেরা এখানে সেবায়ত হিসেবে কাজ করেন।”

মকর সংক্রান্তির দিনই এখানে মেলা বসে। শুধু মেলা নয়, এখানে অগণিত মানুষ পিকনিকের জন্য এ দিন হাজির হন। পীরের মাজারে শুধু ইসলাম ধর্মালম্বী পরিবারই নয়, হিন্দুরাও হাজির হন। এখানে পুজোর উপকরণ হিসেবে দু’ধর্মের মানুষ নিয়ে আসেন মুরগি।

Advertisement

অনেকেই আস্ত মুরগি নিয়ে হাজির হন। তারপরে মাজারে সেই মুরগি ছুঁইয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। আর সেই মুরগিকে ধরতে শুধু কিশোর, যুবকেরাই নয়, বয়স্ক মানুষেরাও হুটোপুটি লাগিয়ে দেন। মেলায় ঘুরতে গিয়ে লাফিয়ে মুরগি ধরে ফেলেন পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি রামপ্রসাদ সরকার। তিনি বলেন, “আইহো থেকে সপরিবারে প্রতিবছরই পীর সাহেবের মেলায় আসি। আমাদের মধ্যে লুঠ দেওয়া হয় বাতাসা। এখানে লুঠ হিসেবে দেওয়া হয় মুরগি। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে যে সেই মুরগি পাবেন তাঁকে ভাগ্যবান বলা হয়। এবারই আমি প্রথম মুরগি পেয়েছি।” কেন দেওয়া হয় মুরগি? কবীর শেখ বলেন, “অনেকে মানত পুরণ হলে মুরগি দেন। সেই থেকে এখানে মুরগি লুঠের চল শুরু হয়েছে।” ইংরেজবাজার শহরের বাসিন্দা তামান্না ইসলাম, চাঁদনি খাতুনেরা বলেন, “মকর সংক্রান্তির দিন হিন্দু মহিলারা বাড়িতে তিলুয়া, খাজা দিয়ে পুজো করেন। এখানে শুধু হিন্দু নয়, তিলুয়া, খাজা দিয়ে দোয়া করি। সকলে এক সঙ্গে মিলে আমরা আনন্দ করি।” এদিনের মিলন মেলাকে ঘিরে মোতায়ন ছিল পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন