পয়লা দিনেই সরগরম মালদহের প্রাচীন রামকেলি মেলা

এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। কথিত রয়েছে, তৎকালীন গৌড়ের বাদশা হুসেন শাহর আমলে মন্ত্রিসভায় ছিলেন মহাবৈষ্ণব বলে পরিচিত রূপ ও সনাতন গোস্বামী। তাঁরাই ১৫০৯ খ্রীষ্টাব্দে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০৫:০০
Share:

পসরা: রামকেলি মেলায় ক্রেতার আশায় ব্যবসায়ী। নিজস্ব চিত্র

বুধবার অধিবাসেই উদ্বোধন হল মালদহের ৫০৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী রামকেলি মেলার। এ দিন রামকেলিতে মদনমোহন মন্দিরের সামনে থাকা মহাপ্রভূ চৈতন্যদেবের মূর্তিতে মালা পরিয়ে ও পরে সাংস্কৃতিক মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সরলা মুর্মু।

Advertisement

তবে চৈতন্যদেব এবং রূপ-সনাতন গোস্বামীর মিলনকে কেন্দ্র করে তিনদিনের যে রামকেলি উত্সব তার সূচনা কিন্তু হবে আজ বৃহস্পতিবার, জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে। বুধবার মেলার উদ্বোধন হতেই ভক্তদের ঢল নামল মেলা চত্বরে। এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে প্রচুর আখড়া এবং সেখানে মেলার কয়েক দিনের জন্য ঘাঁটি গেড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীরা। সেখানে দিনভর চলছে কীর্তনের আসর। এ দিন রামকেলির বাদুল্লাবাড়িতে রূপ-সনাতন মিলন মন্দির ও বৈষ্ণব চর্চা কেন্দ্রে উদ্বোধন হল উত্তরবঙ্গের প্রথম নবকুঞ্জর।

এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। কথিত রয়েছে, তৎকালীন গৌড়ের বাদশা হুসেন শাহর আমলে মন্ত্রিসভায় ছিলেন মহাবৈষ্ণব বলে পরিচিত রূপ ও সনাতন গোস্বামী। তাঁরাই ১৫০৯ খ্রীষ্টাব্দে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁরা বৃন্দাবনের আদলে রামকেলিতে আটটি কুণ্ড বা পুকুরও খনন করেন এবং তাঁরা রামকেলিকে কার্যত বৃন্দাবনের রূপ দিতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে রামকেলি ‘গুপ্ত বৃন্দাবন’ বলেও পরিচিতি লাভ করে। আর এই দুই মহাবৈষ্ণবের সঙ্গে দেখা করতে ১৫১৫ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ জুন জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে রামকেলিতে এসেছিলেন মহাপ্রভূ চৈতন্যদেব। তাঁদের এই মিলন হয়েছিল মদনমোহন মন্দির সংলগ্ন কেলিকদম্ব ও তমাল গাছের তলে। মহাপ্রভূ ও রূপ-সনাতনের এই মিলন দিনকে ঘিরেই রামকেলিতে উৎসব বা মেলা হয়ে আসছে। এ বার ৫০৩ তম বছর। প্রথা অনুযায়ী এ দিন অধিবাসের দিনেই মেলার উদ্বোধন হল। দুপুর আড়াইটেয় রামকেলি মেলার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। ছিলেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ, সহকারী সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ- সহ অন্যান্যরা।

Advertisement

এ দিকে এ দিন সকাল থেকেই গোটা রামকেলি গ্রাম জুড়ে বসে গিয়েছে হরেক কিসিমের দোকানপাট. পুজোর সরঞ্জাম থেকে শুরু করে কীর্তনের খোল-করতাল কী নেই সেখানে। রয়েছে বেতের ধামা। বিক্রি হচ্ছে আমও। মেলার উদ্বোধনের পর থেকেই মেলা চত্বরে ভক্তদের ঢল নামে. বিক্রিবাট্টাও ভালো বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গোটা রামকেলি জুড়ে বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের প্রচুর আখড়াও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দিনভর চলেছে কীর্তন। মদনমোহন মন্দির চত্বরেও আশ্রয় নিয়েছেন প্রচুর ভক্ত। মেলায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জোরদার পুলিশি ব্যবস্থাও রয়েছে। মেলায় মানুষজন যাতে অবাধে যাতায়াত করতে পারে সে জন্য মহদিপুর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য কেন্দ্রের রাস্তায় পণ্যবাহী লরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সুস্থানি মোড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন