এ বার কোচবিহার রাজ আমলের ইতিহাস বইয়ের পাতায় ঠাঁই পেল। আজ, মঙ্গলবার কোচবিহার এনএন পার্কে একটি অনুষ্ঠানে ওই বই প্রকাশ করা হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল, কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ নেই। রাজস্থানের জয়পুর থেকে শুরু করে একাধিক শহর যেখানে তাঁদের রাজ আমলের ইতিহাসকে সামনে রেখে পর্যটনের প্রসার ঘটিয়েছে, সেখানে কোচবিহার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। বাম আমল থেকে তৃণমূল কেউই তা গুরুত্ব দেয়নি।
শুধু তাই নয়, অভিযোগ, রাজ আমলের অনেক নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বহু ভবনের ভগ্নপ্রায় দশা হলেও কেউ সে দিকে নজর দেয় না। এ বারে ওই বই প্রকাশের কথা জানতে পেরে অনেকে আশ্বস্ত হয়েছেন। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি কোচবিহারের ইতিহাসকে তুলে আনার। ছবি ও লেখা দুটোই রাখা হয়েছে বইয়ে। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করবে বলেই আমার বিশ্বাস।” তিনি জানান, ওই বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোচবিহার, দি ল্যান্ড অফ রয়্যালস।’
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার জানান, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, “বইটি এখনও হাতে পাইনি। আগে দেখতে হবে কতটা ইতিহাস তুলে আনা সম্ভব হয়েছে। রাজস্থানের জয়পুর, উদয়পুর যেখানে দেশের পর্যটন মানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছে, সেখানে কোচবিহার নিয়ে কারও কোনও উৎসাহ নেই। এই অবস্থা বদলাতে হবে।” তিনি দাবি করেন, কোচবিহারে রাজ আমলের নিদর্শন রক্ষার দায়িত্বও নিতে হবে প্রশাসন ও সরকারকে। কোচবিহারের বাসিন্দা লেখক দেবব্রত চাকি মনে করেন, ওই বই শুধু প্রকাশ করলে হবে না, তা পর্যটকরা যাতে হাতে পান সে জন্য প্রচারও করতে হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ৭২ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে কোচবিহারের নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে রাজবাড়ি থেকে শুরু করে রাজ আমলে তৈরি হওয়া নানা ঐতিহাসিক ভবনের খোঁজ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ছিটমহল নিয়ে নানা তথ্যও। রাজবাড়ি ছাড়াও কোচবিহার মদনমোহন মন্দির, বড়দেবী বাড়ি, পারিজাত ভিলা, ভিক্টর প্যালেস, সাগর দিঘি, ব্রাহ্ম মন্দির, ভোলা আশ্রম, ল্যান্স ডাউন হল, মধুপুর ধাম থেকে শুরু করে ধলুয়াবাড়ির শিব মন্দির, গড় কামতেশ্বর সব জায়গার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। শহরের মধ্যেই থাকা রাজ আমলে তৈরি হওয়া বাড়িগুলির কোনওটি এখন জেলাশাসকের বাংলো, কোনওটি রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির অফিস, আবার কোনওটি সরকারি বাংলো হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওই বাড়িগুলি নিয়েও নানা তথ্য রয়েছে। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের ক্যাম্প, চ্যাংরাবান্ধার তিনবিঘা করিডরের কথাও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। অনেকেরই আশা, কোচবিহারের নানা তথ্য যদি সঠিক ভাবে তুলে ধরা হয় তাহলে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নেবে কোচবিহার।