কী ভাবে দুর্ঘটনা, ধন্দ কাটেনি শহরে

অভিজিৎবাবুর সঙ্গে ওই রাতে ছিলেন তাঁর ছোটবেলার দুই বন্ধু রহিত ঘোষ এবং প্রসেনজিৎ দে। তাঁরা পেশায় ব্যবসায়ী। দুর্ঘটনায় তাঁরা হাতে পায়ে বুকে অল্প বিস্তর চোট পেয়েছেন বলে দাবি করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

শেষযাত্রা: শনিবার গভীর রাতে শিলিগুড়ির বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে অভিজিৎ রায়চৌধুরীর দেহ নিয়ে যাওয়া হল কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাটে। শহর শোকগ্রস্ত ছিল রবিবারও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরীর গাড়ির দুর্ঘটনা ঠিক কী ভাবে হয়েছিল, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি চব্বিশ ঘণ্টাতেও। কলকাতা থেকে ফেরার পথে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের কাছে একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান অভিজিৎ। বিজেপির দুই নেতা মুকুল রায় এবং রাজু বিস্তা পরে শিলিগুড়িতে অভিজিৎবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন। পরে তাঁরা দাবি করেছিলেন, অভিজিৎবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কারা সেই পরিকল্পনা করে, তা স্পষ্ট করেননি তাঁরা। তবে রবিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। দলের নিচুতলার এক অংশ চাইছে, রহস্যের জট কাটানো হোক। শনিবারও অভিজিৎবাবুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন সাংসদ বিস্তা।

Advertisement

অভিজিৎবাবুর সঙ্গে ওই রাতে ছিলেন তাঁর ছোটবেলার দুই বন্ধু রহিত ঘোষ এবং প্রসেনজিৎ দে। তাঁরা পেশায় ব্যবসায়ী। দুর্ঘটনায় তাঁরা হাতে পায়ে বুকে অল্প বিস্তর চোট পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়নি। তাঁরা দু’জনেই দাবি করেন, পুলিশ এখনও তাঁদের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। করলে তাঁরা জানাবেন, সে দিন রাতে কী ঘটেছিল।

কী ঘটেছিল?

Advertisement

দু’জনেই জানান, ঘটনার সময় তাঁরা ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে জেগে ওঠেন। তাই কীভাবে দুর্ঘটনা হয়েছিল, তার পরিষ্কার ধারণা তাঁদের নেই। ঘটনার পরই গাড়ির সামনে একটি ট্রাক দেখেছিলেন বলে জানান রহিত। তবে সেটি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিল, না মাঝরাস্তায় ছিল, তা স্পষ্ট মনে করতে পারছেন না তিনি। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি কিছু ক্ষণের জন্য জ্ঞান হারান বলে দাবি করেন রহিত। অজয় শা প্রায় দু’বছর হল অভিজিতের গাড়ির চালক। তাঁর দাবি, ‘‘সামনের ট্রাকটি হঠাৎ ব্রেক কষে বলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল গাড়ি।’’

শনিবারই বহরমপুর থানা তদন্ত শুরু করেছে। রবিবার মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘কী ভাবে ওই দুর্ঘটনা হল, তার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

অভিজিতের পরিবার ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘অভিজিতের মৃত্যু নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় মেনে নিতে পারছেন না তাঁর পরিবার এবং দলের বেশ কিছু সমর্থক। তাই প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। শোকের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলে হয়তো অভিযোগ দায়ের করতে পারে।’’ অভিযোগ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি সেরকম গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেই দাবি করছেন দলীয় নেতাদের একটি অংশ।

বিজেপির একটি অংশের দাবি, পুলিশ কেন রহিত, প্রসেনজিৎ ও অজয়বাবুকে একনও কোনও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি কেন? দুর্ঘটনার তত্ত্ব হিসেবে কুকুরকে পাশ কাটাতে যাওয়া, দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির পিছনে ধাক্কা দেওয়ার মতো নানা পরস্পরবিরোধী তথ্য উঠে আসছে। ঘটনাস্থলে সে রকম কোনও ট্রাকও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি। তার উপরে, পুলিশের একটি অংশের দাবি, গাড়ি যদি ১২০ বা ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রাকের পিছনে গিয়ে ধাক্কা দেয়, তা হলে আরও অনেক বেশি চোট বাকিদের হওয়ার কথা। গাড়িটিরও আরও ক্ষতি হওয়ার কথা। সেই সব রহস্যের জট এখনও ছাড়ানো হয়নি বলেই দলের একটি অংশ তদন্তের দাবি তুলছেন।

শনিবার রাতে দেহ নিয়ে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কিরণচন্দ্র শ্মশানঘাটে। সঙ্গে ছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement