শিকারি থেকে হন হাতি বিশারদ

এক সময় অসম বাংলা সীমান্তের কাছেই অসমের গৌরীপুর রাজবাড়িই হাতিদের বাড়ি বলেই পরিচিত ছিল বেশি।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ০৭:১৪
Share:

ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী।

অবিভক্ত বাংলার উত্তরবঙ্গে জন্মেছিলেন ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। ময়মনসিংহ জেলার কালিপুর গ্রাম থেকে গারো পাহাড়ের রেখা পরিষ্কার ফুটে উঠত। পরবর্তীতে তিনি সেই গারো পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে বহু বার গিয়েছেন। অসম, বাংলা ভূটান সীমান্তের জঙ্গল হাতের তালুর মতোই অত্যন্ত পরিচিত ছিল তাঁর।

Advertisement

এক সময় অসম বাংলা সীমান্তের কাছেই অসমের গৌরীপুর রাজবাড়িই হাতিদের বাড়ি বলেই পরিচিত ছিল বেশি। প্রকৃতীশচন্দ্র বড়ুয়া বা লালজি উত্তরের জঙ্গলের প্রথম হাতি বিশেষজ্ঞ বলে সর্বত্র স্বীকৃত। সেই গৌরীপুর বাড়ির সঙ্গে গভীর ঘনিষ্ঠতা হয় ধৃতিকান্তবাবুর। এক সময়ের শিকারি ধৃতিকান্তবাবু যে পরে হাতি গবেষক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান, সেই আলোচনায় উত্তরবঙ্গের বন জঙ্গল এবং গৌরীপুর রাজবাড়ির কথা আবশ্যিক। তাই ধৃতিকান্তবাবুর মৃত্যুতে গৌরীপুরেও শোক ছড়িয়েছে। এ দিন গৌরীপুর রাজ পরিবারের সদস্য তথা হাতি গবেষক পার্বতী বড়ুয়া বলেন, “ধৃতিকান্তবাবুর মৃত্যু যেন আমার পরিবারেরই কারও প্রয়াণের মতো। পরিবারের সদস্য বিয়োগের থেকে কোনও অংশে কম নয় তাঁর জীবনাবসানের শোক। ছোট থেকেই তাঁকে আমাদের বাড়ি এবং পিলখানাতে বহু বার আসতে দেখেছি।”

গরুমারা যখন জাতীয় উদ্যান হিসাবে স্বীকৃতি পায়, তখন বন পরিচালনার জন্যে যাত্রাপ্রসাদ নামের হাতিটিকে রাজ্য বন দফতরকে তুলে দেন লালজি। সেই যাত্রাপ্রসাদ হাতিটির সঙ্গেও ধৃতিকান্তবাবুর একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছিল। যাত্রাপ্রসাদের মৃত্যুর পর গরুমারার বনাধিকারিকরা যাত্রাপ্রসাদের স্মৃতি ধরে রাখতে হাতিটির নামে নজরমিনার তৈরি করে এবং সেই নজরমিনারের সামনে মাহুত পিঠে যাত্রাপ্রসাদের মূর্তি তৈরি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বুনো হাতিরা সেই মূর্তি ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেলে। সেই সময় ধৃতিকান্তবাবুই বন দফতরকে জানান, বুনো হাতিদের এলাকাতে হাতির মূর্তি কখনই নিরাপদে থাকতে পারে না। তাঁর কথাতেই ফের যাত্রাপ্রসাদের মূর্তি বানানোর পরিকল্পনা ত্যাগ করে বন দফতর।

Advertisement

ধৃতিকান্তবাবু রাজ্য বন্যপ্রাণ বোর্ডের সদস্য ছিলেন দীর্ঘ কাল। সেই থেকেই দীর্ঘ সখ্য ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসুর সঙ্গেও। অনিমেষবাবু এ দিন বলেন, “ধৃতিকান্তবাবু বহু বার শিলিগুড়িতে এসেছেন। বহু বার তাঁকে শিলিগুড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি বনজঙ্গল ছাড়া কোথাও রাত্রিবাস করতে চাইতেন না, জলদাপাড়ার নীলপাড়া বন বাংলো ছিল তাঁনার রাত্রিবাসের সেরা ঠিকানা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন