ব্যাঙ্ক টাকা দিল না, মজুরি মেটাব কী করে

বাগানে ১৭০০ জন শ্রমিক। তাদের পরিবার মিলিয়ে সাড়ে ৬ হাজার মানুষ বাগানে থাকেন। নোট বাতিল ঘোষণার পর থেকেই শ্রমিক মজুরি কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। কোম্পানির মালবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

Advertisement

রজত দেব

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৫
Share:

বাগানে ১৭০০ জন শ্রমিক। তাদের পরিবার মিলিয়ে সাড়ে ৬ হাজার মানুষ বাগানে থাকেন। নোট বাতিল ঘোষণার পর থেকেই শ্রমিক মজুরি কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম।

Advertisement

কোম্পানির মালবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। শিলিগুড়ির সেবক রোডে একটি নামী বেসরকারি ব্যাঙ্কে লোন অ্যাকাউন্টও রয়েছে। বাগানে প্রতি ১৫ দিনের পর শ্রমিক মজুরি দেওয়া হয়। ৯ নভেম্বরের কেন্দ্রীয় ঘোষণার মাত্র ৩ দিন পর অর্থাৎ চলতি মাসের ১২ তারিখেই স্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া হয়ে যায়। এরপর আবার ১৯ তারিখে বাগানের অস্থায়ী শ্রমিকদের মজুরিও বকেয়া হয়ে যায়। গত ২৫ তারিখেও আরও এক দফা স্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া হয়। মালবাজারের বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে আমাদের পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে গেলেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আমাদের টাকা দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন। গত বৃহস্পতিবার মালবাজারে কেন টাকা দেওয়া যাবে না জানতে চাই। ব্যাঙ্কের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় যেহেতু এই ব্যাঙ্কটিতে আমাদের সংস্থার কোনও ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট নেই, তাই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। অথচ হাসিমারা শাখায় থাকা এই একই ব্যাঙ্ক থেকে ক্রেডিট অ্যাকাউন্ট না থাকা সত্ত্বেও একটি চা বাগানকে টাকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানতে পারি।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা মেলার আশা নেই দেখে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির ব্যাঙ্কটির অ্যাকাউন্টে চেক দিতে বলি। শুক্রবার ১২ লক্ষ টাকার সেই চেক প্রস্তুত হয়। সকালেই শিলিগুড়ির সেবক রোডের বেসরকারি সংস্থার ব্যাঙ্কটিতে পৌছে যাই। কিন্তু টাকা মেলেনি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাদের এত টাকা একলপ্তে দেবার অনুমোদন নেই বলে জানায়। উপর মহলে অনুমোদন মেলার জন্যে তারা চেষ্টা করবে বলেও জানায়। সন্ধ্যার পরেও অনুমোদন মিলতে পারে এই আশাতে বসে থাকি। শুক্রবার রাত দশটা অবধি টাকার আশায় বসে থেকে যখন আমি ক্লান্ত, বিধ্বস্ত তখন অবশেষে টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। বাগানের সাড়ে ৬ হাজার শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের চেহারাগুলো তখন আমাদের মুখের সামনে ফুটে উঠছে। শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ , রবিবারের পর আবার সোমবার শুনছি বন্‌ধ থাকবে। কবে মজুরির টাকা পাব তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে নিজের রক্তচাপ বাড়িয়ে ফেলেছি। শ্রমিক সংগঠনগুলো পাশে থাকবে জানিয়েছে, কিন্তু বাগানের বাচ্চা, বৃদ্ধ বৃদ্ধদের মুখের দিকে আর তাকাতে পারছি না।

Advertisement

(সিনিয়র ম্যানেজার, ইনডং চা বাগান, মেটেলি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন