West Bengal Panchayat Election 2023

লড়াই না উন্নয়ন, আজও জানে না পাহাড়

দু’দশক পরে, পাহাড়ের মাটিতে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে। শেষ বার পঞ্চায়েতের কাজ, পরিষেবা পাহাড় দেখছিল ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫১
Share:

বর্যার পাহাড়ি ঝোরার সঙ্গে জল বাড়ছে তিস্তাতেও। —ফাইল চিত্র।

নতুন করে ‘নিয়ন্ত্রণ’ আর ‘অস্তিত্বের’ লড়াই দেখছে পাহাড়। এক পক্ষ নেমেছে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে মাটি আরও শক্ত করতে। আর এক পক্ষ লড়াই চালাচ্ছে নড়বড়ে মাটি শক্ত করতে, যা কিছু দিন আগেও ছিল বেশ শক্তই। বর্যার পাহাড়ি ঝোরার সঙ্গে জল বাড়ছে তিস্তাতেও। মাঝেমধ্যেই কাদামাটিতে ভাসছে রাস্তাঘাট। সেখানে মাটি কামড়ে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার গ্রামীণ এলাকায় চরকিপাক খাচ্ছেন পাহাড়ের নেতারা। দু’দশক পরে, ‘নিয়ন্ত্রণ’ আর ‘অস্তিত্বের’ লড়াইয়ের মাঝেই প্রশ্ন উঠছে পরিষেবা, পরিকাঠামো থেকে উন্নয়ন নিয়ে। আর তাতে পাট্টা থেকে পর্যটন, কৃষি থেকে শিক্ষা, কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে পরিকাঠামো— আগামী দিনে গ্রামের মাটিতে কতটা অগ্রাধিকার পাবে তাই ভাবাচ্ছে বিজনবাড়ি থেকে সুখিয়াপোখরি বা রংলি-রংলিয়ট, তাকদার গ্রামের পাহাড়বাসীকে।

Advertisement

দু’দশক পরে, পাহাড়ের মাটিতে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে। শেষ বার পঞ্চায়েতের কাজ, পরিষেবা পাহাড় দেখছিল ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে। ব্লক অফিস থেকে পঞ্চায়েত অফিস, সব থাকলেও শেষ কথা বলতেন ঘিসিংই। দার্জিলিং যাওয়ার রোহিণীর রাস্তা থেকে ডাউহিলের পাকদণ্ডী, মিরিক সৌরণীর লেক বা কার্শিয়াংয়ের ডাউহিলের বিদ্যুদয়ন কিংবা লাভা-লোলেগাঁও নিকটবর্তী আলগাড়ার জল প্রকল্প, সবই কয়েক দশকের পুরনো পাহাড়ে। কিছু পানীয় জল, বিদ্যুৎ, ছোট রাস্তা, সেতু, কালভার্টের কাজ হলেও অনেকটাই উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে পাহাড়ি গ্রাম। সেখানে ছিল নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন। পার্বত্য পরিষদের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে, এই আশঙ্কায় পঞ্চায়েত ভোট আর হয়নি পাহাড়ে। একই ধারা বজায় রেখে গিয়েছিলেন (গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) ‘জিটিএ’ তৈরির কারিগর, একদা পাহাড়ের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ বিমল গুরুংও। অভিযোগ, সে নিয়ন্ত্রণ হারানোর চিন্তায় তিনিও ভাবেননি পাহাড়ের গ্রাম নিয়ে।

সকাল থেকে কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি পথে হেঁটে বড় রাস্তায় এসে গাড়ি ধরে গ্রামবাসীদের ব্লক অফিস পৌঁছে ঘুরতে হয় একটা শংসাপত্রের জন্য। বছরের পরে বছর বদল হয়নি পরিস্থিতি। ২০১৭ সালে ‘নতুন করে সূর্য ওঠা’র দাবি করা হয় পাহাড়ে। একদলীয় শাসন সরিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ‘খেলা’ শুরু হয়। বিধানসভা, লোকসভা, জিটিএ এবং পুরসভা ভোট পর পর এসেছে। বিজেপি ও সঙ্গীরা লোকসভা, বিধানসভায় মাটি শক্ত রাখলেও জিটিএ, পুরসভা ভোটে এসে হারিয়ে যেতে বসে। এ বার তাই তাদের অস্তিত্বের লড়াই। অস্তিত্বের লড়াই গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড এবং মন ঘিসিংয়েরও। একা প্রতিপক্ষেরসঙ্গে এখন না পেরে, শেষে হাত ধরেছেন বিজেপির। সঙ্গীদের নিয়ে যৌথ মঞ্চের জোট বেঁধে ভোটে নেমেছে বিজেপি। যদিও মঞ্চের কাঠামো বেশ নড়বড়ে। কারণ সেখানে জোটসঙ্গীরাই একে অন্যকে কটাক্ষ করেছেন। বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা অবস্য বলছেন, ‘‘গণতন্ত্র বাঁচিয়ে এবং দুর্নীতিবাজদের সরানোর লড়াই আমরা নেমেছি।’’

Advertisement

উল্টো দিকে, পাহাড়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সেই নিয়ন্ত্রণের চেয়ারে এখন আর এক নতুন ‘চেহারা’ অনীত থাপা। মুখে পাহাড়ের জন্য পঞ্চায়েত ভোট আনার দাবিদার হলেও, এলাকাবাসীর একাংশের ধারণা, অনীত দলবল নিয়ে লড়ছেন ‘নিয়ন্ত্রণ’ কায়েম রাখতে। পুরসভা, জিটিএ, একটি বিধানসভার পাহাড়ের গ্রাম দখলে থাকলে আগামী কয়েক বছরনিশ্চিন্তে তিনি দার্জিলিংয়ের লালকুঠিতে বসতে পারবেন তা জানেন অনীত। অনীতের অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় শক্তির হাত থেকে গোর্খা এবং পাহাড়ের গ্রামের মাটি বাঁচানোর লড়াই লড়ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন