আলিপুরদুয়ারে সাইটে এমন অনেক নম্বরই আপডেট করা হয়নি।
থানা থেকে আইসি বদল হয়েছে পাঁচ মাস আগে, কিন্তু পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে তাঁর ছবি সরেনি।
যানচলাচল নিয়ে যাবতীয় তথ্যই রয়েছে, তবে তার সবই আট বছর আগের।
ওয়েবসাইটের নম্বর নিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে এক অফিসে ফোন করা হলে, রিং বাজছে অন্য অফিসে।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পুলিশ ওয়েবসাইট এমনই ভুরি ভুরি বিভ্রাট-ভ্রান্তিতে ভরা। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কোনও থানায় এফআইআর দায়ের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা ওয়েবসাইটে তুলে দিতে হবে। নভেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রশ্ন, যাদের ওয়েবসাইটে নিজস্ব পরিকাঠামোর তথ্যেই ভুল, তারা অভিযোগ ওয়েবসাইটে আপলোড করতে কতটা সক্রিয় হবে?
উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ি কমিশনারেট ছাড়াও সব জেলা পুলিশেরই নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ওয়েবসাইটের বিন্যাস কেতা-দুরস্ত্। যদিও, পুলিশ অফিসারদের তথ্যেই ভুল। অফিসারদের পরিচিতিতে ছবির সঙ্গে নামের মিল নেই।
শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার আইসি বদল হয়ে গিয়েছেন বিধানসভা নির্বাচনের সময়ই। অথচ কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে নতুন আইসি অনুপম মদুমদারের নাম থাকলেও ছবি প্রাক্তন আইসি রাজেন ছেত্রীর। আবার, গোয়েন্দা বিভাগের এসিপি থাকাকালীন মাস খানেক আগে যিনি অবসর নিয়েছেন, কমিশনারেটের ওয়েবসাইট সেই আধিকারিককে এখনও কর্তব্যে বহাল রেখেছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে এক সাব ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারকে আইসি হিসেবে ‘প্রমোশন’ দিয়ে দিয়েছে ওয়েবসাইট।
প্রধাননগর থানার আইসি পদটি দীর্ঘ দিন ধরে খালি থাকলেও ওয়েবসাইটে আইসি হিসাবে দেখানো হয়েছে ওসি অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে। সঙ্গে ছবি রয়েছে। সেই ছবি আবার অনির্বাণবাবুর নয়, অন্য এক অফিসারেরা।
কমিশনারেটের অধীনে কলেজ-স্কুল, হাসপাতাল-নার্সিংহোম, অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য, ট্রাফিক ফোর্স বা অডিট রিপোর্টের মতো নিয়ম মেনে বিভাগ থাকলেও প্রতিটি বিভাগে কোনও তথ্য নেই। দার্জিলিং জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের পর ট্রাফিকের কী অবস্থা, তার কোনও তথ্যই নেই। পাহাড়ের ধস প্রবণ রাস্তার ট্রাফিক পরিস্থিতি জানানোর কথা ঘোষণা করা থাকলেও তা আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।
পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেছেন, ‘‘ওয়েবসাইটটি ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের ওয়েবসাইট আগাম তথ্যও দিচ্ছে। ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধীর তালিকায় অভিযুক্তদের ছবি রয়েছে। কে কবে থেকে ফেরার তাও উল্লেখ রয়েছে। তাতে মনু সরকার নামে একজনকে ‘২৩’ সালের জুলাই মাস থেকে ফেরার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক পুলিশ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘১৯২৩ সাল থেকে ফেরার এমনটাও হতে পারে। সবই ই-বিভ্রাট।’’
নতুন জেলা ঘোষণা হয়েছে আলিপুরদুয়ার। পুলিশের ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে বছরখানেক আগে। নতুন ওয়েবসাইটও ভুলে ভরা। রিজার্ভ ইন্সপেক্টরের নম্বর ওয়েবসাইটে দেখে ফোন করা হলে, বেজে উঠবে এসডিপিও অফিসের ফোন। একই ফোন নম্বর একাধিক অফিসারের হিসেবে ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ অবশ্য দাবি করেছে, ওয়েবসাইটটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হচ্ছে। দ্রুত সব সংশোধন করে দেওয়া হবে।
মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও নেটের সমস্যা তেমন নেই। তবে অফিসারদের অনেকেরই মত, নেটের চেয়েও বড় ব্যাপার দক্ষ, প্রশিক্ষিত পুলিশকর্মী থাকা। তাঁরা থাকলে এফআইআর-এর তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া মোটেই শক্ত নয়। কারণ, এমনিতেই থানাগুলি থেকে এসএমএস কিংবা হোটায়সঅ্যাপে নানা এফআইআর পৌঁছে যায় পুলিশের নানা গ্রুপে। সেখান থেকে তা জেলার কন্ট্রোল রুমে আপডেট হয়। কন্ট্রোল রুম থেকে জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে কিংবা কমিশনারেটে তুলে দেওয়াটা সমস্যা নয়। জেলা সদরে নেট সমস্যা তেমন নেই।