India-China

সহযোগী চিনা সংস্থা, কাজ হবে কি?

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সেতু নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ওই কাজের বরাত যৌথ ভাবে পেয়েছিল ভারতের ‘আরকেইসি’ ও চিনের ‘কিংদো কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’। 

Advertisement

অভিজিৎ সাহা 

নিউ খেঁজুরিয়া (মালদহ) শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ০৫:০৮
Share:

ভগ্নাবশেষ: এখনও মালদহের বৈষ্ণবনগরে গঙ্গা নদীর উপরে দ্বিতীয় ফরাক্কা সেতুর ভেঙে পড়া অংশ পড়ে রয়েছে। নিজস্ব চিত্র

লাদাখে চিন সীমান্তে উত্তেজনার জেরে ফরাক্কায় গঙ্গার উপরে নির্মীয়মাণ দ্বিতীয় সেতুর ভবিষ্যৎ নিয়ে ছড়িয়েছে অনিশ্চয়তা।

Advertisement

ওই সেতু নির্মাণে ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল চিনা সংস্থা। লাদাখে ভারতীয় জওয়ানদের উপরে হামলার জেরে বিদেশি ওই সংস্থাকে প্রকল্প থেকে সরানোর দাবিতে একযোগে সরব তৃণমূল-বিজেপি।

উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগের জন্য সত্তর দশকে গঙ্গার উপরে তৈরি হয়েছিল ফরাক্কা ব্যারেজ। যানবাহনের সংখ্যা বাড়তেই সেটিতে যানজট বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গঙ্গার উপরে দ্বিতীয় সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয় নির্মাণকাজ।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সেতু নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। ওই কাজের বরাত যৌথ ভাবে পেয়েছিল ভারতের ‘আরকেইসি’ ও চিনের ‘কিংদো কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’।

চিনা প্রযুক্তিতে জোরকদমে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনায় থমকে যায় সেতু নির্মাণের কাজ। ওই দিন মালদহের বৈষ্ণবনগরের নিউ খেঁজুরিয়া এলাকার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তম্ভের উপরে ‘লঞ্চিং গার্ডারের’ সাহায্যে স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছিল। সেই সময় গার্ডারের একাংশ স্ল্যাবের উপরে ভেঙে পড়ে। দুমড়ে মুচড়ে যায় নির্মীয়মাণ সেতুর একাংশ। ঘটনায় মৃত্যু হয় সেতুর কাজে যুক্ত থাকা দু’জনের। আহতও হন তিন জন। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চলছিল বলে অভিযোগ করে সরব হন গ্রামবাসীরা। নমুনা সংগ্রহ করে রাজ্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে শুরু হয় তদন্তও।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ সংক্রান্ত রিপোর্ট মেলেনি। লকডাউন শুরু হওয়ায় বাড়ি ফিরে যান সেতুর কাজে যুক্ত ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা। বর্ষার মরসুম শুরু হওয়ায় গঙ্গায় এখন কাজও সম্ভব নয়।

ঠিকাদার সংস্থা সূত্রে খবর, নির্মীয়মান সেতুর ৮৮টি স্তম্ভের মধ্যে ৪৬টি তৈরি হয়েছে। স্তম্ভের উপরে স্ল্যাব বসানো বাকি। এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ বাকি।

এমন অবস্থায় চিন সীমান্তে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোয় সেতুর কাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার সুনীল কুমার বলেন, ‘‘আপাতত কাজ করা সম্ভব নয়। চার মাস ধরে নদীতে পড়ে থাকা যন্ত্রাংশ তুলে তীরে রাখার কাজ হচ্ছে। আমাদের এবং চিনের সংস্থা যৌথ ভাবে কাজ করছে। চিনের কিছু যন্ত্রাংশ ব্যবহার হয়েছে। এর থেকে বেশি আমার কিছু জানা নেই।’’

মালদহের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রকল্প ডিরেক্টর দীনেশ হানসারিয়া বলেন, ‘‘ভারত ও চিনের সংস্থা যৌথ ভাবে ট্রেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছিল। দুর্ঘটনায় সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। চিনা সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হবে কিনা তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন।”

মালদহ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা চন্দনা সরকার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার চিন নিয়ে নানা কথা বলছে। বিজেপির নেতাকর্মীরা চিনা সামগ্রী বয়কটের ডাক দিচ্ছেন। অথচ, চিনা সংস্থাকে সেতু নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই ভারতীয় সংস্থাকে দিয়েই কাজ করানো হোক।’’

বৈষ্ণবনগের বিজেপির বিধায়ক স্বাধীন সরকার বলেন, “আমরাও চাই চিনের সংস্থাকে বাদ দিয়ে ভারতীয় সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হোক। বিষয়টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে জানানো হবে।’’

তবে সাধারণ মানুষের একাংশের দাবি, যানজট থেকে মুক্তি দিতে দ্রুত শেষ করা হোক গঙ্গার উপরে নির্মীয়মাণ দ্বিতীয় ফরাক্কা সেতু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন