টেন্ডার নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব গড়াল সংঘর্ষে

পঞ্চায়েতের টেন্ডারে কাজ পাওয়া নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার হিলি থানার বিনশিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে প্রকাশ্যে ওই মারপিটের ঘটনার পর মন্ত্রিগোষ্ঠী বনাম বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর অনুগামীদের নাম জড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্রাবণীদেবী মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী গোষ্ঠীর অনুগামী বলে পরিচিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০৩:০১
Share:

পঞ্চায়েতের টেন্ডারে কাজ পাওয়া নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার হিলি থানার বিনশিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে প্রকাশ্যে ওই মারপিটের ঘটনার পর মন্ত্রিগোষ্ঠী বনাম বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর অনুগামীদের নাম জড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্রাবণীদেবী মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী গোষ্ঠীর অনুগামী বলে পরিচিত। তাঁর স্বামী সুব্রত লাহাকে জখম অবস্থায় বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দিকে বিপ্লব মিত্র গোষ্ঠীর অনুগামী মানস লাহা নামে এক তৃণমূল কর্মী আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। তাঁর চিকিৎসা করানো হয়। স্বামীকে মারধরের ঘটনায় কর্মাধ্যক্ষ শ্রাবণীদেবী দলেরই উপপ্রধান সমেত মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে হিলি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। মানসবাবুদের পক্ষে কর্মাধ্যক্ষের স্বামী-সহ পাল্টা ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া জানিয়েছেন, দুই তরফে অভিযোগ পেয়ে হুমকি, হামলা ও মারপিটের অভিযোগের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘ঘটনার কথা জানা নেই। তেমন হলে বিষয়টি ব্লক সভাপতি দেখবেন।’’ এ বিষয়ে মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে এলাকায় একটি পুকুর বাঁধানোর কাজ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। কর্মাধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন তার আগে প্রায় লক্ষাধিক টাকার একটি সিমেন্ট বাঁধাইয়ের কাজ করেছিল বলে পঞ্চায়েত সূত্র্রে খবর। ফলে পুকুর বাঁধাইয়ের কাজের বরাত এ বারে তাদের দিতে মানসবাবুরা পঞ্চায়েতে তদ্বির শুরু করেন বলে অভিযোগ। তৃণমূল পরিচালিত বিনশিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নরেশ সরকার বলেন, ‘‘ঘটনার দিন দু’পক্ষই পঞ্চায়েতে এসেছিলেন। পুকুর বাঁধানোর কাজ যেন তাঁরা পান, মানসবাবুরা কথা বলে ওপর তলা থেকে নীচ তলায় নেমে যান। তার পরই শুনি মারপিট লেগেছে। আমি সে সময় আমার ঘরেই ছিলাম। অথচ ওই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’’

Advertisement

এ দিন কর্মাধ্যক্ষ শ্রাবণী পাল লাহা বলেন, ‘‘আমার স্বামী ও কয়েক জন মিলে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম করেন। অথচ রাস্তাঘাটে আমাকে এবং আমার স্বামীকে দেখলেই অভিযুক্ত মানস ও তাঁর সঙ্গীরা অপমানজনক কটূক্তি করে। দেখে নেব বলে হুমকিও দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত অফিসের সিঁড়িতে ওঠার সময় মানসবাবুদের সঙ্গে কর্মাধ্যক্ষের স্বামী সুব্রতবাবুদের মুখোমুখি হতেই তাঁকে কটূক্তি করা হলে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানান বলে অভিযোগ। সে সময় বচসা থেকে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে সুব্রতবাবুকে মেঝেতে ফেলে দেওয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বুকে এবং কপালে আঘাত পেয়ে তিনি জখম হন। রাতেই তাঁকে হিলি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় গেলে উত্তেজনা কমে।

মানসবাবুর পাল্টা অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডারের বরাত নিয়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্যা প্রভাব খাটিয়ে স্বজনপোষণের চেষ্টা করেন। ওঁর কথা না শুনে অফিস কর্মীদের বলতে গেলে ওরা আমাদের উপর চড়াও হয় বলে তাঁর অভিযোগ। দলের জেলা সভাপতি বিপ্লববাবুর অনুগামী তৃণমূলের হিলি ব্লক সভাপতি আশুতোষ সাহা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে টেন্ডার নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও কথা কাটাকাটি থেকে ঘটনাটি ঘটে বলে শুনেছি। কর্মাধ্যক্ষকে কটূক্তি করার অভিযোগ ঠিক নয়। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’

দলীয় সূত্রের খবর, মন্ত্রী গোষ্ঠী অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূলের বিনশিরা অঞ্চল সভাপতি সমীরণ মোহান্তও ঘটনাটি বেশি দূর গড়াতে দিতে চান না। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কোনও বিষয় নেই। দু’পক্ষ একই দলের। ফলে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সকলেই উদ্যোগী হয়েছেন।’’ থানা থেকে দু’পক্ষই অভিযোগ তুলে নেবেন বলে তিনি দাবি করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন