Dead Elephant

কাটা মাথা ও পা একই হাতির? তদন্ত

কুমারগ্রাম ব্লকের অসম-বাংলা সীমানা লাগোয়া বারবিশার কাছে, কাঁঠালতলা এলাকায় সংকোশ নদী থেকে গত শুক্রবার উদ্ধার হয়েছিল হাতির একটি কাটা মাথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার, কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ০৯:২২
Share:

নদীপাড়ে টেনে আনা হচ্ছে কাটা মাথাটি। —নিজস্ব চিত্র।

আলিপুরদুয়ারে উদ্ধার হওয়া কাটা মাথা ও পা একই হাতির দেহাংশ—প্রাথমিক তদন্তে এমনই ধারণা বন দফতরের আধিকারিকদের। তবে অসম লাগোয়া এ রাজ্যে হাতির একাধিক দেহাংশ পাওয়ার পরে, অসমের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছে রাজ্য। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অভিযোগ, অসমে হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও, কেন সে রাজ্য তা স্বীকার করছে না, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। যদিও অসমের বনাধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা তাঁদের এলাকার নদীতে তল্লাশি চালিয়েও ওই হাতির দেহাংশের খোঁজ পাচ্ছেন না।

Advertisement

কুমারগ্রাম ব্লকের অসম-বাংলা সীমানা লাগোয়া বারবিশার কাছে, কাঁঠালতলা এলাকায় সংকোশ নদী থেকে গত শুক্রবার উদ্ধার হয়েছিল হাতির একটি কাটা মাথা। ওই এলাকা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নিমাইটাপু এলাকায় একই নদী থেকে সোমবার সন্ধ্যায় ফের হাতির কাটা পা উদ্ধার হয়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতির কাটা মাথার মতোই কাটা পায়েরও ময়না-তদন্ত হয়েছে। রাজাভাতখাওয়ায় গত শনিবার কাটা মাথার ময়না-তদন্তের পরে বনকর্তারা জানিয়েছিলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। বক্সার রাজাভাতখাওয়ায় হাতির পায়ের অংশের ময়না-তদন্তের পরে, বনকর্তারা জানান, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী এ ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কথা সামনে এসেছে। ফলে, কাটা মাথা ও পা একই হাতির দেহাংশ বলেই অনুমান বনকর্তাদের।

কিন্তু হাতিটি কোথায় মারা গিয়েছে? এ রাজ্যের বনকর্তারা প্রথম থেকেই জানিয়ে আসছেন, বক্সা-সহ আশপাশের জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়েও হাতির কোনও দেহাংশের সন্ধান মেলেনি। ফলে, হাতির মৃত্যু এ রাজ্যে হয়নি বলে তাঁরা মনে করছেন। এ রাজ্যে তেমন ঘটার সম্ভাবনা যদি থেকেও থাকে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

তবে রাজ্যের বনমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত, অসমেই গোটা ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু অসম সরকার বা সেখানকার বন দফতর তার দায়ভার নিতে চাইছে না। গোটা বিষয়টিকে তারা বক্সার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”

অসমের বন দফতরের কচুগাঁও ডিভিশনের ডিএফও ভানু সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের শীর্ষ আধিকারিকেরা ঘটনাটি আমাদের জানান। আমরা তিন দিন ধরে প্রায় ৩০ জনের একটি দল স্থানীয় লোকেদের সহযোগিতা নিয়ে আমাদের এলাকার জঙ্গলে এবং ওই নদীতে তল্লাশি চালিয়ে কোনও কিছুই এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। ওই নদীটি বক্সার জঙ্গলের পশ্চিমবঙ্গ এলাকার পাশাপাশি, আমাদের এলাকা এবং ভুটানের সঙ্গে যুক্ত। তাই নিশ্চিত করে পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ভুটান— কোন জায়গায় ওই ঘটনা ঘটেছে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। আমরা নদীতে এই বর্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কিছুর সন্ধান পাইনি। ফলে, ঘটনা ভুটানেও ঘটে থাকতে পারে বলে মনে হয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমার ধারণা, হাতিটি দাঁতওয়ালা কমবয়স্ক। এ ধরনের নৃশংস কাজের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। নদীতে আমাদের তল্লাশি জারি থাকবে।’’

কিন্তু এ ক্ষেত্রে আবারও প্রশ্ন উঠছে, দুর্ঘটনাবশত হাতিটি বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে, না কি সেটিকে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট করে খুন করা হয়েছে? খোদ বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনাবশত বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে হাতির মৃত্যুর পর ধরা পড়ার ভয়ে সেটির দেহ লোপাটের চেষ্টাও অনেক সময় হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটি হয়েছে কিনা, তা অবশ্য স্পষ্ট নয় রাজ্যের বনাধিকারিকদের কাছে। কারণ, বক্সা সহ আশপাশের জঙ্গলে এদিনও তল্লাশিতে মেলেনি হাতির অন্য কোনও দেহাংশের সন্ধান। তবে এ নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। ফলে এই প্রশ্নও উঠছে, হাতিটি এ রাজ্যেই মারা যায়নি তো? রাজ্যের বনাধিকারিকদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, হাতির ধড় না মেলা পর্যন্ত এ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তাঁদের অনুমান, হাতিটি অসমে মারা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন