চেনা জমি, তাই রথ শুরু কোচবিহারে

বিজেপির অন্দরের খবর, দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বৈঠকে বসেই কোচবিহারের নাম বেছে নেওয়া হয়। সেখানে একাধিক জেলার নাম উঠে এসেছিল, কিন্তু সব দিক বিচার করে কোচবিহারকেই প্রাধান্য দেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:২৬
Share:

প্রস্তুতি: কোচবিহারের ঝিনাইডাঙায় অমিত শাহের সভার মঞ্চ গড়া হচ্ছে। মঙ্গলবার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে যে সব এলাকায় তাঁদের ভাল ফলের আশা রয়েছে তাদের মধ্যে উত্তরবঙ্গ অন্যতম বলে বলাবলি করছেন বিজেপি নেতারাই। বিজেপি সূত্রেরই খবর, উত্তরবঙ্গের মধ্যে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির সংগঠন সবচেয়ে ভাল। মাদারিহাটের বর্তমান বিধায়ক বিজেপির। চা বলয়ে গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি বেশ কিছু জায়গায় জয়ী হয়েছে। এর পরে মালদহ বা দার্জিলিংয়ের নাম আসবে। মালদহে বিজেপির বিধায়ক রয়েছে, দার্জিলিংয়ের সাংসদ বিজেপির। কিন্তু, এই তিন জেলার কোনওটিকেই বেছে না নিয়ে কেন কোচবিহার থেকেই রথযাত্রা শুরুর সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি? এই প্রশ্নই ঘুরছে কোচবিহারে।

Advertisement

বিজেপির অন্দরের খবর, দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের বৈঠকে বসেই কোচবিহারের নাম বেছে নেওয়া হয়। সেখানে একাধিক জেলার নাম উঠে এসেছিল, কিন্তু সব দিক বিচার করে কোচবিহারকেই প্রাধান্য দেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে একাধিক বিষয় মাথায় রাখা হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে খবর। প্রথমত, কোচবিহার ভৌগোলিক দিক থেকে এমন একটি জেলা যার অধিকাংশ এলাকা বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে যুক্ত। এই সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান বা গরুপাচার নিত্যদিন ঘটে বলে অভিযোগ। রয়েছে অনুপ্রবেশের সমস্যাও। বিজেপির যে প্রচারের বিষয়, তার সমস্ত উপাদান এই জেলায় রয়েছে। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, আজ থেকে দীর্ঘসময় আগেও বিজেপির একটা অস্তিত্ব ছিল এই জেলায়। গত লোকসভা উপনির্বাচনে বামেদের পেছনে ফেলে কোচবিহারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বিজেপি। গোটা রাজ্যের ক্ষেত্রেই বিজেপি যে শক্তির বিচারে দ্বিতীয় দল সেই বার্তা এই জেলা থেকেই শুরু হয়।

একসময় তৃণমূল-বিজেপির জোট ছিল রাজ্যে। সে সময় পঞ্চায়েত স্তরে বামেদের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় লড়াই করে সফলতাও পায় ওই জোট। তখন থেকেই দুই দলের নেতা থেকে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে একটা সখ্যতা ছিল। পরে জোট ভেঙে গেলেও নিচুস্তরে দুই দলের কর্মীদের সখ্যতা একেবারে নষ্ট হয়নি বলে দু’দলের অনেক কর্মীই একান্তে জানিয়েছেন। এমন প্রমাণও মিলেছে। তৃণমূল বিধায়ক অশোক মণ্ডল দল ছেড়ে বিজেপিতেই যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, যুব তৃণমূল ও মূল তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে রাজ্যের শাসক দলের একটি অংশের কর্মীরা ক্ষুব্ধ। ওই অংশও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। তাঁদের দাবি, এক অংশের ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বিজেপির প্রতি ‘টান’ তৈরি হয়েছে। তাঁরা সরাসরি বিজেপি না করলেও ওই দলের সভা যাতে সফল হয়, সেই চেষ্টা ভিতরে ভিতরে করছেন। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিজেপির এই দাবি মানছেন না। এক নেতার কথায়, ‘‘আমাদের দলের ঐক্য অটুট। বিজেপি দিবাস্বপ্ন দেখছে।’’

Advertisement

গত বিধানসভা ভোটের আগে বীরপাড়া চা বাগানের মাঠে সভা করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে সময় তাঁর ওই মঞ্চে ছিলেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোশিয়েসন নেতা অনন্ত রায় (মহারাজ)। গ্রেটার সমর্থকদের কয়েকশো গাড়ি ভর্তি মানুষ ওই মাঠ ভরিয়ে দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, অনন্ত মহারাজ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলা ছেড়েছেন। কিন্তু, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। সেই অংশের সমর্থনও পাবে বিজেপি। বিজেপি নেতৃত্বের আশা, লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে ভাল ফল করবেন তাঁরা। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, “সব দিক দেখলে কোচবিহার সব থেকে ভাল জায়গা। এখান থেকেই রাজ্য জুড়ে লোকসভার হাওয়া তুললে ফলপ্রসূ হবে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রাথ ঘোষ অবশ্য বিজেপির এই দাবিকে আমল দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “কোনও ভাবেই বিজেপি এই জেলায় ভাল ফল করবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন