খুশির আলো জান্নাতের ফলে

প্রাথমিকে পড়ার সময় লন্ঠনের আলো ছিল ভরসা। সেই নাহারিন জান্নাত জুবিলিই এ বারে হাই মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় রাজ্যে সপ্তম স্থান পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে গ্রামে। খুশির আলোই যেন জ্বলেছে সারা গ্রামে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৭ ০২:১৫
Share:

মেধাবী: মাদ্রাসায় সপ্তম জান্নাত নাহারিন। —নিজস্ব চিত্র।

প্রাথমিকে পড়ার সময় লন্ঠনের আলো ছিল ভরসা। সেই নাহারিন জান্নাত জুবিলিই এ বারে হাই মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় রাজ্যে সপ্তম স্থান পেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে গ্রামে। খুশির আলোই যেন জ্বলেছে সারা গ্রামে।

Advertisement

কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে পুটিমারী-ফুলেশ্বরীর জীবরামের কুঠি গ্রামে সকাল থেকে ভিড় জমে রয়েছে। বাসিন্দারা তো বটেই। শহর থেকে জান্নাতের বাড়িতে ছুটে গিয়েছেন তাঁর শিক্ষক, আত্মীয়রা। সাংসদ নিজে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জান্নাতকে। স্কুল সূত্রের খবর, পানিশালার ধাইয়ের হাট হাই মাদ্রাসার ছাত্রী জান্নাত নাহারিন সব মিলিয়ে পরীক্ষায় পেয়েছেন ৭৩১। নাহারিনের প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯৩, অঙ্কে ৯৪, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৩, জীবনবিজ্ঞানে ৯৬, ইতিহাসে ৮৫, ভূগোলে ৯৬, এবং ইসলামিক পরিচয়ে ৮৮।

ভাল ফল যে তিনি করবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না নাহারিনের। কিন্তু রাজ্যে সপ্তম স্থান পাবেন, তা ভাবেননি কখনও। জান্নাতের কথায়, “খুব ভাল লাগছে। ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল করতে চাই। প্রশাসনিক পদে চাকরিতে যোগ চাই। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাব।”

Advertisement

স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, চার বোনের মধ্যে দ্বিতীয় নাহারিন। তাঁর বাবা মোফাজ্জল হোসেন একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক (মাদ্রাসা)। মেয়েদের ভাল করে পড়াশোনা করিয়ে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা তিনি শুরু থেকেই করছেন।

মোফাজ্জল জানান, এক সময় কৃষি কাজের উপরে নির্ভর করেই সংসার চলত। ২০১১ সালে তিনি এমএসকেতে শিক্ষতার সুযোগ পান। সেখানেও সাম্মানিক ভাতা নিয়মিত নয়। তাই কষ্ট করেই চলতে হয় তাঁকে। বছর পাঁচেক আগে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে তাঁর বাড়িতে। তার আগে মেয়েরা লন্ঠনের আলোতেই পড়াশোনা করতেন। বড় মেয়ে এবিএন শীল কলেজের ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। দ্বিতীয় মেয়ে নাহারিন এ বারে মাধ্যমিক পাশ করলেন। তিনি বলেন, “ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে আল আনসার মিশনের গার্লস হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। খুব ভাল লাগছে মেয়ে এত ভাল ফল করেছে।”

দেওয়ের হাট হাই মাদ্রাসার শিক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, “জান্নাতের পড়াশোনার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। ক্লাসে কখনও খারাপ ফল করেনি। আগামীতে আরও বড় জায়গায় নাহারিন পৌঁছবে বলে আমাদের বিশ্বাস।” সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “খবরটা শুনেই ভাল লেগেছে। নাহারিনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছি। তাঁর পাশে থাকব সব সময়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন