উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে জেই সন্দেহে ভর্তি সাগর দেবনাথকে<br> দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পর এমআরআই করাতে না পেরে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার বাবা। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
জাপানি এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্ত সিসিইউ’র এক যুবককে এমআরআই পরীক্ষা করাতে নিয়ে গিয়ে দুই ঘণ্টারও বেশি ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এমআরআই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে পরে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে ব্যবস্থা করে না পাঠালে এমআরআই করা যাবে না বলে সিসিইউ’তে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অথচ স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকদের কেউ তা করেও পাঠাননি। রোগীর পরিবারের লোকেরা বলতে গেলেও তাতে ফল হয়নি। সেকারণে এ দিন তাঁর মস্তিষ্কে এমআরআই পরীক্ষাও হয়নি।
হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গে জেই বা এইএস হানায় যেখানে একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছেন সেখানে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রোগীকে এ ভাবে হেনস্থা হতে হবে কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন রোগীর পরিবারে এবং বাসিন্দাদের একাংশ। শনিবার ঈদ এবং তার পর রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় চিকিৎসকদের অনেকেই নেই বলে অভিযোগ। রোগীদের একাংশ জানান, শনিবার রাতে তাদের চিকিৎসক দেখতে যাননি। এ দিন সকালেও চিকিৎসক আসেননি বলে বেলা দেড়টা নাগাদ জানান কয়েকজন রোগীর পরিবারের লোকেরা। সুপারের দফতরে গিয়েও কয়েকজন ঘুরে এসেছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘এমআরআই করার ক্ষেত্রে নড়াচড়া করলে সমস্যা হতে পারে। আবার মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় বলে এ ধরনের রোগীদের ইনজেকশন দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা রয়েছে। তাই সিনিয়র চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেই মতো পরিমিত ঘুমের ওষুধ দেওয়ার বা অজ্ঞান করার দরকার হয়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’ এ দিন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন তা নিয়ে অবশ্য কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার। তবে রবিবার বলে চিকিৎসকের অভাবের বিষয়টি তিনিও স্বীকার করেছেন।
এ দিন বেলা একটা নাগাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে থাকা পিপিপি মডেলের এমআরআই কেন্দ্রে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় জেই আক্রান্ত ওই যুবক সাগর দেবনাথকে। প্রথমে জানানো হয় অন্য দুই রোগীর পর করা হবে তাই অপেক্ষা করতে। পরে জানানো হয় রোগীকে ঘুমের ওষুধ বা অজ্ঞান করে না আনায় সমস্যা হয়েছে। ওয়ার্ড থেকেই সেই ব্যবস্থা করে পাঠানোর কথা বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিবাশ্রী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে রোগীকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া বা অজ্ঞান করার ব্যাপার নেই। আমরা চেষ্টা করেছিলাম এমআরআই করার। কিন্তু রোগী নড়াচড়া করছিলেন বলে সম্ভব হয়নি।’’ তবে বিষয়টি ওয়ার্ডে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীদের জানানো হয়েছে কি না তা নিয়ে উত্তর মেলেনি।
এ দিন এমআরআই কেন্দ্রে পরীক্ষা করাতে আসা কাজি মহম্মদ এবং ৬ বছরের মেয়ে শীলা সিংহকে নিয়ে আসা সুনীলা সিংহ এখানকার নিয়মকানুন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, পরীক্ষা করানোর পরও তাদের বিল দেওয়া হচ্ছিল না। কেন্দ্রের আধিকারিকরা জানান, একটি কম্পিউটার থাকায় পরীক্ষা রিপোর্ট দেওয়ার সময়ই একবারে বিল দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ ওঠার পর এ দিন তাদের ডেকে পরে বিল দেওয়া হয়েছে। কাজি মহম্মদের আরও অভিযোগ, কানের সমস্যা জন্য তিনি ২৭০০ টাকা দিয়ে এমআরআই করিয়েছেন। তবে তা ঠিক মতো আসেনি বলে আবার দু’হাজার টাকা দিয়ে করাতে হবে বলে জানানো হয়েছে। অভিয়োগ নিয়ে শিবাশ্রীদেবী বলেন, ‘‘এমআরআই-তে কিছু না মেলায় বিশেষ ওযুধ দিয়ে ওই পরীক্ষা করাতে হবে। ওষুধের দাম হিসাবে ওই টাকা লাগবে।
মেডিসিন ওয়ার্ডেও চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে এ দিন অভিযোগ করেন রোগীর লোকেরা। খিঁচুনি জ্বর নিয়ে আক্রান্ত তন্ময় সরকারের মা চিন্ময়ী দেবী, ধরণী বর্মনের আত্মীয় রাজীব সিংহরা জানান, কাল রাতে চিকিৎসক আসেননি। এ দিন সকালেও কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। উত্তরবঙ্গ মে়ডিক্যালের ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘জেই বা এইএস রোগীদের নিয়মিত দেখার জন্য রুটিন করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা অন্তর নার্স চিকিৎসকরা কী ভাবে নজরদারি চালাবেন ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও অভিযোগ উঠছে কেন দেখা হবে।’’
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য আরও চিকিৎসক, ওষুধ সরঞ্জাম দরকার বলে জানান শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। বিশেষ করে সিসিইউ’র শয্যা বাড়ানো দরকার বলে তিনি দাবি করেন। পুর এলাকাতে ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিস রোগ ঠেকাতে স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শে তাঁরা কাজ করতে চান বলে জানান। তবে স্বাস্থ্য দফতর থেকে এখনও পঞ্চায়েত, পুরসভাকে নিয়ে বৈঠক করে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করায় সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মেয়র।
এ দিন শিলিগুড়ি পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে সচেতনতা প্রচারে অংশ নেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয় চক্রবর্তীরা। দাদাভাই ক্লাব লাগোয়া সত্যেন বসু রোডে ব্লিচিং ছড়ানো এবং স্প্রে করা হয়। আগামী ২৫-৩১ জুলাই সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের নিয়ে রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন। যে ওয়ার্ড থেকে অশোকবাবু জিতেছেন ২৪ জুলাই সেই ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ ধরনের সভা হবে বলে জানান। শহরের কিছু জায়গায় যে ঠিক মতো সাফাই হচ্ছে না, আবর্জনা জমে থাকছে এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়র। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিকাশি সাফাইয়ের দিকে আরও জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। মেয়র বলেন, ‘’আমরা আরও গাড়ি কেনা এবং সাফাই পরিষেবা বাড়াতে জোর দিচ্ছি। ভবিষ্যতের কথা ভেবে শহরকে বাঁচাতে তাই ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা জরুরি।’’ পুরসভার বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল বলেন, ‘‘শহরের ৫০ শতাংশ আবর্জনা সাফ হচ্ছে না। নিকাশি নালা বেহাল হয়ে রয়েছে। প্রশাসক বোডের্র সময়ও শহর এতটা বেহাল ছিল না। মশা মারতে স্প্রে’র তেল বেশি করে দিতে হবে। ধোঁয়া দিতে হবে।’’