সারারাত ধরে পুজোর পর রীতি মেনে দেবী প্রতিমার বিসর্জন হয়েছে ভোররাতেই। রাত পোহাতেই রবিবার থেকে ৩০০ বছরের পুরানো ওই মেলা শুরু হয়েছে। মালদহের ঐতিহ্যবাহী গোবরজনা কালীমাতা ঠাকুরানির ওই মেলা চলবে তিনদিন ধরে।
কালীপুজো উপলক্ষে জেলার সবথেকে বড় ওই মেলাকে ঘিরে রবিবার সকাল থেকেই জমজমাট গোটা এলাকা। গোবরজনার ওই পুজো এখন চৌধুরী পরিবার করে। শোনা যায়, এই পুজো একসময় শুরু করেছিল দস্যুরা। দস্যুদের প্রবর্তিত রীতি মেনেই কালীপুজোর রাতে আজও শূন্যে গুলি ছুড়ে পুজোর সূচনা হয়। গুলি ছোড়ার পর গোবরজনার চৌধুরী বাড়ি থেকে ঢাকঢোল, আতসবাজির রোশনাইয়ের মধ্যে দিয়ে দেবী প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় দেড় কিলোমিটার দূরে আমবাগানে স্থায়ী মন্দিরে। পুজো শেষে কালিন্দীতে দেবী বিসর্জনের পর রবিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে মেলা। গোবরজনার ওই পুজো পারিবারিক হয়েও তা হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। কারণ ওই পুজো রতুয়া ছাড়াও জেলার অন্যতম বড় কালীপুজো ও মেলা। ভিড়ের ঠেলায় পুজো ও তিনদিনের মেলার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে কালঘাম ছুটে যায় পুলিশের। এবারও মোতায়েন করা হয়েছে শতাধিক পুলিশকর্মী।
শোনা যায়, ঘন জঙ্গলে ভরা কালিন্দীর পাড়ে একসময় ঘাঁটি গেঁড়েছিল বিহারের একদল দস্যু। জলপথে উত্তরবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ডে দাপিয়ে বেড়াতো তারা। তখন সেই এলাকার ত্রিসীমানায় কোনও জনপদ ছিল না। তখন দিনের বেলাতেও ওই জঙ্গলে ঢোকার সাহস পেতেন না কেউ। দস্যুরাই চালাঘরের মন্দির গড়ে সেখানে পুজো শুরু করেছিল। কথিত আছে, নদীপথে বজরায় যাওয়ার সময় সেখানেই কয়েকদিন ছিলেন এবং ওই কালীমন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন দেবী চৌধুরানি। সেই থেকে ওই পুজোকে আজও দেবী চৌধুরানির পুজো বলে মনে করেন অধিকাংশ বাসিন্দা। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্থানীয় চৌধুরী পরিবার পুজো শুরু করে।
এই পুজোয় মালদহ ছাড়াও দুই দিনাজপুর, বিহার, ঝাড়খন্ড থেকে আসা দর্শনার্থীদের ঢল নামে। চৌধুরী পরিবারের তরফে আবির চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা পুজো করলেও কখনও এই পুজোকে পারিবারিক পুজো ভাবি না।’’