কিতকিত ছেড়ে ক্যারাটেতে মন দিচ্ছে মেয়েরা

খেলার চর্চার আত্মরক্ষার কৌশল জানতে জেলার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে মেয়েদের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনকী তাদের অনেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে নজর ওকাড়ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

দলবেঁধে: চলছে প্রশিক্ষণ। কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

কিতকিত খেলার বয়স যাদের তাদেরও কেউ শিখছে উসু, কেউ ক্যারাটে। বয়সে যারা খানিকটা বড় তাদেরও ভিড় বাড়ছে।

Advertisement

আত্মরক্ষার এমন পাঠেই আগ্রহ বাড়ছে কোচবিহারের মেয়েদের। স্কুল, কলেজের ছাত্রীরা তো বটেই সরকারি হোমের আবাসিকরাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অন্য খেলার চর্চার আত্মরক্ষার কৌশল জানতে জেলার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে মেয়েদের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনকী তাদের অনেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে নজর ওকাড়ছে।

জেলা ক্যারাটে ও উসু প্রশিক্ষণের একাধিক সংস্থা সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহারে স্কুল পড়ুয়া শিশু থেকে নাবালিকাদের মধ্যে একসময় কিতকিত খেলে সময় কাটান বা আনন্দে মেতে ওঠার প্রবণতা ছিল। সময়ের প্রবাহে ক্রিকেট, ব্যাডমিণ্টন, টেবিল টেনিস, ফুটবল, দাবার মত নানা খেলাধূলোর চর্চাতে আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু সেভাবে ক্যারাটে, উসুর ঝোঁক ছিলনা কয়েক বছর আগেও। ইভটিজিং সমস্যা থেকে পথেঘাটে বিপদের আশঙ্কা এড়ান নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় ওই ছবি বদলেছে। কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উপমা বর্মনের কথায়, “যখন আরও ছোট ছিলাম তখন কিতকিত খেলতাম। ক্যারাটে শিখতে আসার পরেও কিছুদিন বান্ধবীদের সঙ্গে ওই খেলেছি। এখন অবশ্য ক্যারাটেতেই সময় দিই।” কোচবিহার উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী মণিজা খাতুন বলছে, “আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। উসুতে বেঙ্গল অলিম্পিকে পুরস্কার পেয়েছি। স্কুল বা টিউশন, সন্ধ্যা হলেও এখন আর একা বেরোতে চিন্তা হয় না।”

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহারের বিভিন্ন স্কুলেও কন্যাশ্রী প্রকল্পের মেয়েদের প্রশিক্ষণে সাড়া মিলেছে। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে আত্মরক্ষার পাঠে আগ্রহী ছাত্রীরা সামিল হয়েছে। হোমেও এক ছবি। কোচবিহারের শহিদ বন্দনা স্মৃতি আবাসের ১৫ জন নাবালিকা গত ফেব্রুয়ারিতে ক্যারাটের বেল্ট পরীক্ষায় দক্ষতা দেখায়। সমাজকল্যাণ দফতরের আওতাধীন ওই হোমের ৩৪ জন আবাসিকের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের ওই পারফরম্যান্সে খুশি প্রশাসনের কর্তারা।

জেলাশাসক কৌশিক সাহা ছাত্রী থেকে আবাসিকদের এমন আগ্রহের কথা জেনে খুশি। কৌশিকবাবু বলেন, “আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রী, আবাসিকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে চেষ্টা হচ্ছে।” কন্যাশ্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা আধিকারিক তমোজিৎ চক্রবর্তী ছাত্রীদের আগ্রহের প্রশংসা করেন। প্রশাসনের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৮ বছর পেরোলে ওই মেয়েদের ওই হোম ছাড়তে হয়। তাদের অনেককে নানা কারণে একা থাকতে হতে পারে। আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ থাকলে সবার মনে বাড়তি সাহস থাকবে। ছোটখাটো সমস্যার মোকাবিলা করতে পারবে। অন্য ছাত্রীদের টিউশন, স্কুল, কলেজে একা যাতায়াতে আত্মরক্ষার সাহস বাড়বে।

ক্যারাটে ডু অ্যাসোসিয়েশনে সম্পাদক রাকেশ সরকার বলেন, “শহরের একাধিক স্কুল, কলেজ ছাড়াও অন্তত ১০টি ক্লাব, সংস্থার মাঠে প্রশিক্ষণ হচ্ছে। প্রায় অর্ধেকই নতুন মেয়ে।” উসু অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি সত্যেন বর্মন বলেন, ‘‘জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার মেয়ে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বছর দু’য়েক আগে এতটা আগ্রহ হবে ভাবতে পারিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন